বাসের দরজা-জানালা থেকে বিজ্ঞাপন সরেছে

বিআরটিএর নির্দেশনার পর বাসের জানালা থেকে বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বিআরটিএর নির্দেশনার পর বাসের জানালা থেকে বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সাত দিনে বাসের জানালা থেকে বিজ্ঞাপন সরবে বলে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নারী যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে গণপরিবহনের জানালা থেকে বিজ্ঞাপন সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বর্তমানে গণপরিবহনের দরজা জানালা থেকে বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো বলছে, বিজ্ঞাপন সরাতে সাত দিন লাগেনি, বিআরটিএ’র ঘোষণার রাতেই বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারিই তিন পরিবহন কোম্পানিও নারী যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাসের জানালা থেকে বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিআরটিএকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর অনলাইনে ‘বিজ্ঞাপনে মোড়ানো গণপরিবহন, ঝুঁকিতে নারীর নিরাপত্তা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, রাজধানীতে কিছু গণপরিবহন চলাচল করছে, যার পুরোটাই বিজ্ঞাপনে মোড়ানো। গণপরিবহনের দরজা-জানালা পুরোটাই বিজ্ঞাপনে ঢাকা। বাইরে থেকে ভেতর বা ভেতর থেকে বাইরে দেখার কোনো উপায় নেই। নারী অধিকারকর্মী, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, এ ধরনের পরিবহন নারীর জন্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। গণপরিবহনের ভেতরে নারী যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের শিকার হলে বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারবে না বা ওই নারী কারও সাহায্য নিতে পারবেন না।

প্রতিবেদনের এ বিষয়টি নজরে নিয়ে তদন্ত করে বিআরটিএ। তদন্তের সুপারিশ অনুযায়ী বাসের জানালা থেকে সব বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। বিআরটিএ গ্রিন ঢাকা, শতাব্দী পরিবহন এবং ঢাকা চাকা বাস মালিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে বাসের জানালা থেকে বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেওয়ার কথা জানান তিন পরিবহন কোম্পানির মালিক। বিআরটিএ জানিয়েছিল, তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত বিষয়টি তদারক করবে।

এ ছাড়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাসের গায়ে বিজ্ঞাপন মোড়ানো নতুন সড়ক আইন-২০১৮-এর পরিপন্থী হওয়ায় বিআরটিএ ওই তিন বাস কোম্পানিকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করে।

বাসের দরজা জানালা থেকে বিজ্ঞাপন সরানো হয়েছে তার প্রমাণ হিসেবে বেশ কিছু ছবি নিয়ে শনিবার প্রথম আলো কার্যালয়ে আসেন রয়্যাল ব্লু অ্যাডভারটাইজিং ফার্মের মালিক মির্জা রকিবুল হাসান এবং এন এন কমিউনিকেশনের মালিক মো. রাশেদুজ্জামান খান। পুরো বাস বিজ্ঞাপনে মুড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি ভুল ছিল তা তাঁরা বুঝতে পেরেছেন বলে উল্লেখ করেন। তাঁরা জানালেন, এভাবে বিজ্ঞাপন প্রচারের আগে তাঁরা বিআরটিএ’র কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি নেননি বা অনুমতি নিতে হয় বলে জানা ছিল না। তবে সিটি করপোরেশন থেকে গেজেট অনুযায়ী ট্যাক্স পরিশোধ করেই গাড়িতে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এখন জানালায় বিজ্ঞাপনের লোগো বা কোনো একটি ছবি থাকলেও বেশির ভাগ জায়গা থেকেই বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

মির্জা রকিবুল হাসান বলেন, বিআরটিএ’র সিদ্ধান্তের পর সাত দিন অপেক্ষা না করে সেদিন রাতেই দরজা ও জানালা থেকে বিজ্ঞাপন খুলে ফেলা হয়েছে। মূলত প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশের পরই বিভিন্ন মহল বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। জানান, তাঁরা সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট হারে ট্যাক্স দিয়েছিলেন এবং নতুন সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন। গাড়িতে যেসব পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছিল ওই সব কোম্পানিও নারীর নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়।

আগে এভাবেই জানালার অংশসহ বিজ্ঞাপনে মোড়ানো ছিল বাস। ছবি: সংগৃহীত
আগে এভাবেই জানালার অংশসহ বিজ্ঞাপনে মোড়ানো ছিল বাস। ছবি: সংগৃহীত

এই দুই অ্যাডভারটাইজিং সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গাড়িগুলোতে বিজ্ঞাপন লাগানো হয়। তবে শুরু থেকেই বাস মালিকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা আপত্তি ছিল।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার সই করা চিঠিতে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে গ্রিন ঢাকার গাড়ির বডিতে বিজ্ঞাপন ব্যবহারের অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত গ্রিন ঢাকার চারটি গাড়ির প্রতিটিতে ৩৫০ বর্গফুট করে বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ আছে চিঠিতে।