নোয়াখালীতে শহরজুড়ে ময়লার ভাগাড়

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ না করায় এ রকম ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নোয়াখালী শহর। গতকাল বেলা দেড়টায় শহরের জেলা জামে মসজিদ মোড়ে।  প্রথম আলো
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ না করায় এ রকম ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নোয়াখালী শহর। গতকাল বেলা দেড়টায় শহরের জেলা জামে মসজিদ মোড়ে। প্রথম আলো

নোয়াখালী শহরের সার্কিট হাউজ-সংলগ্ন সেন্ট্রাল রোডের অর্ধেকটাই ঢেকে গেছে ময়লা-আবর্জনায়। এরপরও ময়লা ফেলা বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিদিনই বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা ফেলছেন সেখানে। কিন্তু ওই ময়লা অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে না প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে। ময়লার দুর্গন্ধে আশপাশের পরিবেশও হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। দুর্গন্ধে সড়কটি দিয়ে চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে নাগরিকদের। এ নিয়ে শহরে বিক্ষোভও করেছেন নাগরিকেরা।

তবে শুধু নোয়াখালী শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কই নয়, এই সড়ক ছাড়াও শহরের প্রধান সড়ক (আবদুল মালেক উকিল সড়ক), হাসপাতাল সড়ক, জজ কোর্ট সড়ক ও মাইজদী হাউজিং সেন্ট্রাল সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের পাশেই গত দুই সপ্তাহে গড়ে উঠেছে ময়লা আবর্জনার অঘোষিত অনেক ভাগাড়। আগে যেখানে প্রতিদিনই ওই সব স্থানে জমে থাকা ময়লা পৌরসভার গাড়ি স্থানান্তর করে নিয়ে যেত এখন দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে তা নেওয়া হচ্ছে না।

পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা ময়লা প্রথমে অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন স্থানে জমা করে রাখা হতো। পরে তা ফেলা হতো সদর উপজেলার আইয়ুবপুর এলাকার ময়লার ভাগাড়ে। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে ময়লা ফেলতে বাধা দেন। তারা ময়লা বহনকারী গাড়ির কয়েকজন চালক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মারধর করেন। এরপর থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেখানে ময়লা স্থানান্তর বন্ধ করে দেন।

গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়কের মাইজদী বাজার, নাপিতের পোল, নতুন বাসস্ট্যান্ড, শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম, নোয়াখালী সুপার মার্কেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সড়কের মাথা, গণপূর্ত ভবন, টাউন হল মোড়, হাসপাতাল সড়ক, হাউজিং সেন্ট্রাল রোড, বড় মসজিদ মোড়, পৌর বাজার, রশিদ কলোনি, বিশ্বনাথ, সার্কিট হাউজ–সংলগ্ন সেন্ট্রাল রোড এলাকা ঘুরে দেখা যায়—প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই ময়লা আবর্জনার বিশাল স্তূপ জমে আছে। 

পরিদর্শনকালে দেখা যায়, কোথাও কোথাও সড়কের পাশের ফুটপাতের ময়লা উপচে সড়কের দিকে গিয়ে পড়ছে। দীর্ঘ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জমে থাকা ময়লার দুর্গন্ধে আশপাশের পরিবেশ হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা নাকে রুমাল দিয়ে কিংবা নাকে হাত দিয়ে চলাচল করছেন। 

ময়লা-আবর্জনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শহরের স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন ধরে পৌরসভার গাড়ি নির্দিষ্ট স্থান থেকে ময়লা স্থানান্তর না করায় রাস্তা দিয়ে হাঁটা চলা করা যায় না। দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। 

নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রী জানায়, সার্কিট হাউজ–সংলগ্ন সড়ক দিয়ে তাদের যাতায়াত। এমনিতেই সড়কটির পাশে ময়লা ফেলা হতো, পরে তা আবার নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু গত কিছুদিন ময়লা জমতে জমতে এখানে স্তূপ হয়ে গেছে। ময়লার তীব্র দুর্গন্ধে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে তাদের খুবই কষ্ট হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ উল্যাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে স্থানীয় কিছু লোক পৌরসভার গাড়িকে আইয়ুবপুরে ময়লা ফেলতে বাধা দেন। তাঁরা কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও গাড়ির চালককেও মারধর করেন। তাই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ওই এলাকায় ময়লা স্থানান্তর করছেন না।

মেয়র মো. সহিদ উল্যাহ খান আরও বলেন, আইয়ুবপুর এলাকার যে জায়গায় এত দিন ধরে ময়লা ফেলা হচ্ছিল ওই জায়গাটি পৌরসভার নিজস্ব। এরপরও স্থানীয় লোকজনের অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করে ইতিমধ্যে তারা স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেটা কিছুটা সময় সাপেক্ষ। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিকল্প একাধিক জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে কয়েক দিনের মধ্যে ময়লা স্থানান্তর শুরু করা হবে।

পৌর মেয়রের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, পৌরসভার ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে একটি এলাকার মানুষজন বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে। দুর্গন্ধের কারণে ওই এলাকায় বাইরের কেউ আত্মীয়তাও করতে চান না। এসব বিবেচনায় তিনি মেয়রকে দেড় বছর ধরেই বলেছেন বিকল্প ব্যবস্থা করতে। মেয়র তা করেননি। 

সাংসদ একরামুল করিম বলেন, কয়েক দিন আগে এলাকার লোকজন তাঁর কাছে প্রতিকার চাইলে তিনি তাঁদের ময়লা ফেলতে বাধা দিতে বলেছেন। হয়তো তাঁরা তাই করেছেন। ওই এলাকার লোকজনের কষ্টের বিষয়টি সেভাবে বিবেচনা করতে হবে। এখন মেয়র যদি ওই এলাকার লোকজনকে বুঝিয়ে কয়েক মাস সময় নিতে চান, তাহলে তা তিনি চাইতে পারেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দাবিতে বিক্ষোভ

নোয়াখালী পৌরসভা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দাবিতে গতকাল রোববার বিকেলে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। বিকেল সোয়া চারটায় পৌর বাজার এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সুধারাম থানার সামনে পর্যন্ত যায়। তবে এ সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।