ঠাকুরগাঁওয়ে 'অজ্ঞাত রোগে' এক পরিবারের দুজনের মৃত্যু

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সনগাঁও গ্রামে অজ্ঞাত রোগে দুই দিনে এক পরিবারের দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই পরিবারের তিনজন। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, কী কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে, তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায়নি।

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মো. মাহফুজার রহমান সরকারের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসা দল গতকাল রোববার ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়, পরিবার ও স্থানীয় সূত্র বলছে, গত শুক্রবার রাতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সনগাঁও গ্রামের হাফিজুল ইসলামের স্ত্রী মিনা বেগম (৩৫) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। পরের দিন শনিবার রাতে হাফিজুল ইসলামের বড় ভাই হাজিরুল ইসলামের স্ত্রী পশিনা বেগম (৪০) অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাঁকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর স্বজনেরা তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেন। কিন্তু গতকাল রোববার ভোররাতে তিনিও মারা যান। পশিনা বেগমের মৃত্যুর পর শাশুড়ি হাজেরা খাতুন (৫৪), পশিনার মেয়ে তানজিনা আক্তার (১৪) ও পশিনার জা মিনাজুল ইসলামের স্ত্রী আলেয়া আক্তার (৩০) অসুস্থ হয়ে পড়েন। এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাদের ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তাদের সেখানেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

দুই দিনে একই পরিবারের দুজন মারা যাওয়া এবং তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে আছেন স্বজনেরা। কী কারণে এমনটা হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি দল ওই গ্রাম পরিদর্শন করেছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, গত শনিবার স্বজনেরা পশিনা বেগমকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তিনি বমি করছিলেন এবং অসংলগ্ন কথা-বার্তা বলছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর পরিবারের লোকজন তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান। পরে তিনি সেখানে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর কারণ শনাক্ত করা যায়নি। পরে ওই পরিবারের তিন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় দুওসুও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, গত বছর তাদের পাশের এক গ্রামে এক পরিবারের পাঁচজন মারা যান। নতুন করে মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একই উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ভান্ডারদহ মরিচাপাড়া গ্রামে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল।

সিভিল সার্জন মো. মাহফুজার রহমান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী কারণে ওই দুজনের মৃত্যু হয়েছে, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। এ কারণে এটাকে আমরা অজ্ঞাত রোগ বলছি। ঘটনা অনুসন্ধান করতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) চার সদস্যের একটি ‘আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশন’ দল ঠাকুরগাঁওয়ে আসছেন। দু-এক দিনের মধ্যে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁরা ভালো আছেন। তবে এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’