পাপিয়ার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

রিমান্ড মঞ্জুর শেষে আদালত থেকে পুলিশ শামীমা নূর পাপিয়াকে নিয়ে যায়। ছবি: ফোকাস বাংলা
রিমান্ড মঞ্জুর শেষে আদালত থেকে পুলিশ শামীমা নূর পাপিয়াকে নিয়ে যায়। ছবি: ফোকাস বাংলা

অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার পৃথক তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার নরসিংদীর জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁর স্বামী মফিজুর রহমানেরও ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন।

এ ছাড়া জাল টাকার মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর দুই সহযোগীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। দুই আসামি হলেন সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিব।

এর আগে পাপিয়াসহ চারজনকে ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিমানবন্দর থানায় করা জাল টাকার মামলায় পাপিয়া, তাঁর স্বামীসহ চারজনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন আদালত। এ ছাড়া শেরেবাংলা নগর থানায় করা অস্ত্র ও মাদক মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীকে ৫ দিন করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। আদালতে দেখা যায়, পাপিয়াসহ চারজনকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে এজলাসকক্ষে তোলা হয়। এরপর তাঁদের আসামির কাঠগড়ায় রাখা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আসামিদের কাছ থেকে জাল টাকা, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পাওয়া গেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হয়েছে। এসব ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, এসব রাষ্ট্রপক্ষের সাজানো নাটক।

আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত শনিবার গ্রেপ্তারের পর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক শাফিউল্লাহ বুলবুল। তিনি বলেন, পাপিয়ার আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো মিল নেই। এ তথ্যের ভিত্তিতেই তাঁরা অভিযান চালিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে গতকাল রোববার ভোর চারটায় র‍্যাব অভিযান চালায়। একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বুকিং দেওয়া বিলাসবহুল প্রেসিডেনশিয়াল স্যুট রুম এবং ইন্দিরা রোডের ফ্ল্যাট থেকে র‍্যাব ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, পিস্তলের ২০টি গুলি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ ও ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করে।

র‍্যাব জানায়, পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর মালিকানায় ইন্দিরা রোডে দুটি ফ্ল্যাট, নরসিংদীতে দুটি ফ্ল্যাট ও ২ কোটি টাকা দামের দুটি প্লট, তেজগাঁওয়ে এফডিসি ফটকের কাছে গাড়ির শোরুমে ১ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামের প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে।

অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, জাল নোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব বলছে, গত ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে এই দম্পতি পাঁচ তারকা হোটেলের কয়েকটি বিলাসবহুল কক্ষে অবস্থান করেন। এ জন্য তাঁরা পরিশোধ করেন ৮১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। র‌্যাবের দাবি, এই অর্থের উৎস সম্পর্কে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি এই দম্পতি।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক। তাঁরা বলেন, ২০০৬ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজে পড়ার সময় পাপিয়ার সঙ্গে মফিজুরের সম্পর্ক হয়। ২০০৯ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তাঁরা স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০১০ সালে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয় পাপিয়াকে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তাঁকে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।