লোহাগড়া-লাহুড়িয়া সড়ক: ভালো সড়কে সংস্কারকাজ

নড়াইলের লোহাগড়ার মানিকগঞ্জ বাজার এলাকায় পাকা সড়কের ওপর দেওয়া হচ্ছে পিচঢালাই। সড়কের ডান পাশের পিচ ঢালাই শেষে বাঁ পাশেও একইভাবে দেওয়া হবে পিচঢালাই। গতকাল তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
নড়াইলের লোহাগড়ার মানিকগঞ্জ বাজার এলাকায় পাকা সড়কের ওপর দেওয়া হচ্ছে পিচঢালাই। সড়কের ডান পাশের পিচ ঢালাই শেষে বাঁ পাশেও একইভাবে দেওয়া হবে পিচঢালাই। গতকাল তোলা। ছবি: প্রথম আলো

পিচ ঢালাই পাকা সড়ক। নেই কোনো ভাঙাচোরা। সুন্দর ও সাবলীল এ সড়ক দিয়ে চলছে অসংখ্য যানবাহন। ওই ভালো পাকা সড়কের ওপর দেওয়া হচ্ছে পিচ ঢালাই। এতে স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, অর্থ লুটপাট করতেই এটি করা হচ্ছে।

গতকাল সোমবার দুপুরে নড়াইলের লোহাগড়া-লাহুড়িয়া সড়কের মানিকগঞ্জ এলাকায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের।

নড়াইল সওজ সূত্রে জানা যায়, লোহাগড়া-লাহুড়িয়া সড়কের চাচই চৌরাস্তা থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত টানা ৩ হাজার ৬০০ মিটার (সাড়ে তিন কিলোমিটার), শিয়রবর এলাকায় ৮০০ মিটার ও কালিশংকপুর এলাকায় ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার সংস্কার করতে প্রায় ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কালিশংকপুর এলাকায় কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে মানিকগঞ্জ এলাকার সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকার কাজ।

গতকাল দুপুরে মানিকগঞ্জ বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে চলাচল করছে ছোট-বড় অসংখ্য যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। ওই পাকা ভালো সড়কের ওপর পাতলা করে পিচ ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। চলাচলের সুবিধার্থে সড়কটির পূর্ব পাশ দিয়ে ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। এরপর ঢালাই দেওয়া হবে পশ্চিম পাশে। পিচ ঢেলে রোলার দিয়ে ডলা হচ্ছে। সেখানে রনি সরদারসহ ১২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কাজ দেখাশোনা করছেন ঠিকাদারের ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হাসান।

শ্রমিকেরা জানান, এই সাড়ে তিন কিলোমিটার তথা ৩ হাজার ৬০০ মিটারের মধ্যে মরিচপাশা এলাকায় প্রায় ৪০০ মিটার হবে গর্ত ও ভাঙাচোরা। বাকি প্রায় ৩ হাজার ২০০ মিটার ভালো। ভাঙা অংশটির গর্ত ভরাট করে পিচ ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ভালো অংশের (৩২০০ মিটার) ওপরও পিচ ঢালাই (সিল কোড) দেওয়া হচ্ছে। এখানে ছয় দিন কাজ করা হয়েছে, আরও দু-তিন দিন লাগবে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারের ব্যবস্থাপক নাজমুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সওজ আমাদের এ কাজ করতে দিয়েছে, তাই আমরা করছি। এসটিমেট তো (প্রকল্প) সওজ করেছে।’

স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সড়কটি ছিল এলজিইডির। গত বছর ১২ জুন লোহাগড়ার কালনা থেকে লাহুড়িয়া হয়ে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত সড়কটি সওজ বিভাগে হস্তান্তর হয়। তখন থেকে সড়কটি সওজের। এর এক বছর আগে এলজিইডি ওই সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় সংস্কার করে। এর আগে প্রায় পাঁচ বছর ধরে সড়কটি বেহাল ছিল।

মানিকগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘কাজ যাঁরা করছেন তাঁদের কাছে বারবার জানতে চেয়েছি, কত খারাপ সড়ক পড়ে আছে, সেখানে কাজ না করে ভালো সড়কে কাজ কেন করছেন। এর উত্তর পাইনি।’

নড়াইল জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জনগণের টাকায় সরকারের রাজস্ব তহবিল হয়। অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে সেই টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। এটি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, ‘আজই (সোমবার) ওই সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম, ভালো সড়কের ওপর পিচ দেওয়া হচ্ছে। এখানে কাজ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। অথচ এলাকায় কত ভাঙাচোরা সড়ক রয়েছে। এ বিষয় নিয়ে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলব।’

জানতে চাইলে নড়াইল সওজের ওই সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই সড়কের কাজের এসটিমেটটি (প্রকল্প) আমিই করেছি। মরিচপাশা এলাকায় গর্ত ও ভাঙাচোরা ছিল। মানিকগঞ্জ বাজার এলাকায় ভালো ছিল।’

ভালো অংশের জন্য কেন সংস্কার প্রকল্প তৈরি করলেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরান হোসেন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেন, ‘অফিসে আসেন, তখন কথা বলব।’

নড়াইল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরিফ বলেন, ‘পাকা সড়কের ওপর ৭-১০ মিলিমিটার পিচ ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। খালি চোখে হয়তো সড়কটি ভালো মনে হচ্ছে। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করতে সার্ভে করে এটি করা হচ্ছে।’