যে কারণে বান্দরবানের চার উপজেলায় হারল আ.লীগ

বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকার পরও বান্দরবানের চার উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থক প্রার্থীরা কেন হারলেন—এ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এ পরাজয়ের জন্য বিএনপির সঙ্গে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সমঝোতা, কিছু নেতার দুর্নীতি, দাম্ভিকতা এবং ব্যক্তি পছন্দের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়নকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীরা।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বান্দরবানের চার উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও চরম পরাজয় ঘটেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থক প্রার্থীদের। রুমায় জেএসএসের অংথোয়াইচিং মারমা, রোয়াংছড়িতে ক্যবামং মারমা, থানচিতে স্বতন্ত্র ক্যহ্লাচিং মারমা ও লামায় বিএনপির থোয়াইনু অং মারমা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য সব পদেও বিএনপি ও জেএসএসের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা, কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে করণীয় ঠিক করতে না পারলে আগামী তিনটি উপজেলা নির্বাচনেও একই পরিণতি হতে পারে। ১৫ মার্চ বান্দরবান সদর ও আলীকদম এবং ২৩ মার্চ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নেতা-কর্মীরা বলেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় এমনিতে এলাকার মানুষের মনে আওয়ামী লীগের ওপর একধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তার ওপর বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগ চলছে জেলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। তাঁরা আঞ্চলিক রাজনীতির বাস্তবতা বিবেচনা না করে নিজেদের আধিপত্য রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে আদিবাসীদের দল থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন। এ জন্য আদিবাসীর অধিকারকামী আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সৃষ্ট আস্থাহীনতা দলের ভরাডুবি তরান্বিত করেছে। দশম সংসদ নির্বাচনেও এমন নাজুক অবস্থা দেখা গিয়েছিল।

জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ স্থানীয় স্বার্থ প্রাধান্য দেওয়ার দল। সে হিসেবে সব সময় জেএসএসকে সঙ্গে রেখে কাজ করতে পারত। কিন্তু কিছু নেতা শান্তি চুক্তির বিরোধীতাকারী বিএনপিকে সেই সুযোগ করে দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে পরাজয় ডেকে এনেছেন। অন্য সব নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

লামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, এখানকার বহিরাগত ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগকে তাঁদের কোটারি স্বার্থে ব্যবহার করছেন। স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় এবারে তাঁরা ভোট দেননি। ফলে, লামায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছেন।

আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, প্রার্থী মনোনয়নে ভুলের কারণে আওয়ামী লীগ হেরে যাচ্ছে। বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় কৌশল পরিবর্তন করে এগোতে পারলে ১৫ ও ২৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় তিনটি উপজেলা নির্বাচনে জেতার আশা করা যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুর রহিম চৌধুরী বলেন, আঞ্চলিক রাজনীতি, জাতিগোষ্ঠীগত সমস্যা ও দলীয় কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে দলের প্রার্থীরা হেরেছেন। আগামী তিনটি উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কৌশল ঠিক করা হচ্ছে।