করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও ‘কোভিড-১৯’ চিকিৎসায় পরিকল্পনা তৈরি করছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। খুব শিগগির তিন স্তরবিশিষ্ট এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনটি ধাপের মধ্যে আছে সতর্কতামূলক পর্যায় (অ্যালার্ট লেভেল), মারাত্মক পর্যায় (সিরিয়াস লেভেল) ও জরুরি পর্যায় (ইমার্জেন্সি লেভেল)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন নির্দেশিকা অনুসরণ করে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তাদের পরামর্শে এই পরিকল্পনা দলিল তৈরি করছেন আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা। এখন পরিকল্পনা দলিল সম্পাদনার কাজ চলছে।

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন সরকারি কর্মকর্তারা। চীনে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ কমছে না। আক্রান্ত দেশের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে নতুন এই ভাইরাসের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা। এই পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন। নতুন রোগের বড় ধরনের প্রকোপ মোকাবিলায় একটি সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি করা খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি প্রস্তুতিবিষয়ক পরিষদের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কী হতে পারে, সেটা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার। বাজেট বরাদ্দের বিষয়টিও গুরুত্বের মধ্যে রাখা উচিত। সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুত থাকলে পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হয়।’

একজন রোগী শনাক্ত হলে কী করা হবে, পাঁচজন শনাক্ত হলে কী করা হবে, রোগীর সংখ্যা বাড়লে কী করা হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা দলিলে বলা হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, বিভিন্ন ধরনের বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মানুষকে সচেতন করা—এগুলো প্রথম বা সতর্কতামূলক ধাপের মধ্যেই পড়ে।

রোগী শনাক্ত হলে, রোগীর সংখ্যা কম থাকলে ব্যবস্থাপনা কী হবে—এসব নিয়ে বিস্তারিত থাকছে দ্বিতীয় ধাপে। রোগীর সংখ্যা বহুগুণ বাড়লে ব্যবস্থাপনা কী হবে, পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, সমন্বয় কীভাবে হবে, কার কী দায়িত্ব—বিস্তারিত থাকবে জরুরি পর্যায়ের পরিকল্পনায়।

বর্তমানে বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া সরকারের বিশেষ কোনো কাজ দৃশ্যমান নয়। তবে এ পর্যন্ত ৩০ টির বেশি দেশে করোনাভাইরাস ছড়ালেও দেশের কোনো বন্দরে একজনও রোগী শনাক্ত হয়নি।

পরিকল্পনা প্রণয়নের ব্যাপারে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পনা প্রণয়নে রোগতত্ত্ববিদ, ভাইরোলজিস্ট, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের যেমন সম্পৃক্ত করা দরকার, তেমনি অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করা দরকার।

পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে জানতে চাইলে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, জাতীয় পর্যায়ে ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কমিটি থাকবে, থাকবে কারিগরি কমিটি। এ ক্ষেত্রে সংক্রামক ব্যাধি আইন (২০১৮) অনুসরণ করা হবে। আইনে কমিটির গঠন বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে।

পরিকল্পনায় বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ব্যাপারে সরকার কোন ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা–ও উল্লেখ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত পাঁচ বাংলাদেশি ও আরব আমিরাতে আক্রান্ত এক বাংলাদেশির ব্যাপারে সরকার ওই দুই দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইতালিতে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। দেশটিতে বৈধ পথে যায়নি এমন বাংলাদেশিরা আছেন। এঁদের মতো বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা আছে সরকারের মধ্যে।

গতকাল সোমবার নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, ‘দেশে এ পর্যন্ত ৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। তাই নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, দেশে এখনো কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি নেই।’

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা জানান, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত চীনফেরত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের আইসোলেশন কক্ষে মেডিসিন বিভাগের পরামর্শক আবুল হোসেন বলেন, স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা–নিরীক্ষায় করোনাভাইরাসের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তিনি টনসিলের প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন। তবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।