মর্মান্তিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিজিবি এগোচ্ছে: মহাপরিচালক

বনানী সামরিক কবরস্থানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সামরিক কর্মকর্তারা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দোয়া করছেন। বনানী সামরিক কবরস্থান, ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন
বনানী সামরিক কবরস্থানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সামরিক কর্মকর্তারা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দোয়া করছেন। বনানী সামরিক কবরস্থান, ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন

পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরের নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পূর্তিতে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে রাজধানীর বনানীতে সামরিক কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) সামরিক বাহিনীর প্রধানেরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ১১ বছর আগে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানের বিজিবি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এ–জাতীয় ঘটনার কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বর্তমানে বিজিবির প্রত্যেক সদস্য এ বিষয়ে সচেতন।

এক প্রশ্নের জবাবে সাফিনুল ইসলাম বলেন, পুনর্গঠনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিজিবির নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী পুনর্গঠন করা হয়েছে। তারা আগের চেয়ে বেশি কার্যক্ষম ও কার্যকর। এটি জেলা পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত।

আজ সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর প্রধান রিয়াল অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) মোস্তাফা কামাল উদ্দীন।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা স্যালুট প্রদান করেন। পরে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, আজ সব সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে পবিত্র কোরআন খতমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিডিআর বিদ্রোহে শাহাদতবরণকারী শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন স্বজনেরা। বনানী সামরিক কবরস্থান, ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন
বিডিআর বিদ্রোহে শাহাদতবরণকারী শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন স্বজনেরা। বনানী সামরিক কবরস্থান, ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুত বিচার শেষ করার আশা করছেন নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা। দিনাজপুরের তৎকালীন বিডিআরের সেক্টর কমান্ডার নিহত কর্মকর্তা কর্নেল কুদরত এলাহীর বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘১১ বছর যে কীভাবে কেটেছে, কী কষ্টের মধ্যে কেটেছে, যাঁর সন্তান গেছে, একমাত্র তিনিই বুঝতে পারবেন। আমার সন্তান নিরপরাধ। কেন তাকে ও তার সঙ্গীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হলো? এর পেছনে কী রহস্য, তা উদ্‌ঘাটন আজও হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আর বেশি দিন বেঁচে থাকব না। কিন্তু আমি এ বিচার দেখে যেতে পারব কি না, জানি না। একটা বিচার হচ্ছে, বিচারপ্রক্রিয়া চলছে, এটা কত দিনে শেষ হবে, তাও জানি না। আল্লাহ যেন এর বিচার করেন।’

বিজিবির সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন মেজর মাকসুমুল হাকিম। ওই দিন তিনিও নিহত হন। তাঁর শ্বশুর মো. আবুল কালাম বলেন, ‘বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হতে কত যুগ লাগবে, কে জানে! তবে আইনানুযায়ী বিচার হচ্ছে, আদালত বিচার করছেন। তবে আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই।’

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহী জওয়ানেরা নৃশংসভাবে হত্যা করেন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে। হত্যাযজ্ঞের বীভৎসতায় বিমূঢ় হয়ে পড়ে গোটা জাতি।

ওই ঘটনার পর সীমান্তরক্ষী বাহিনীটিকে পুনর্গঠন করা হয়। বাহিনীর নাম, পোশাক, পতাকা, মনোগ্রামসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসে। ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) দাপ্তরিকভাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নামে পথচলা শুরু করে।

নৃশংস ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হয়, যা পরে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বরে হত্যা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত। ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার বিচারিক আদালতের রায়ের পর​ হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন ও আপিলের ধাপ শেষ হয়েছে। এখন আপিল বিভাগে আপিল করার পালা।

হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চের বিচারপতিরা পিলখানা হত্যা মামলায় ১৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড ও সাজা বহালের সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করে গত মাসে রায় দেন।