ভিপি নুরুলের হামলার তদন্তের শেষ কবে, কেউ জানে না

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। ফাইল ছবি
ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের ওপর হামলার তদন্ত ছয় দিনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু তিন দফায় সময় বাড়িয়েও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত কমিটি তদন্ত শেষ করতে পারেনি। এরই মধ্যে চলে গেছে দুই মাস। এখন কমিটি বলছে, কবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

তদন্ত কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষ হয়েছে। রেকর্ড করা সাত থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টার সাক্ষাৎকার শুনে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। মাঝে সাত দিন আমি দেশের বাইরে ছিলাম। কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দিব, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না।’

গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা–কর্মীরা। এতে নুরুলসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এ হামলার আগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা–কর্মীরা ডাকসু ভবনেও ভাঙচুর চালান। হামলার পরদিন ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে প্রথমে ছয় কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। পরে তিন দফায় আরও ৩৫ কার্যদিবস অতিরিক্ত সময় নেয় তারা। এই সময়সীমা শেষ হয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি।

ডাকসু ভবনে হামলার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। একটির বাদী পুলিশ, অন্য দুটির বাদী ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান দুই নেতা। এই দুই নেতার করা মামলায় নুরুল ও তাঁর সহযোগীদের আসামি করা হয়। ডাকসু ভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আট নেতাকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরাসহ আট আসামিই এখন জামিনে মুক্ত।

ভিপি নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তের নামে আসলে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা সনজিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসেন সরাসরি জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের নেই৷

>

ডাকসু ভবনে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা

গত এক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে অন্তত নয়বার হামলার শিকার হন ডাকসু ভিপি নুরুল হক। এসব হামলায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

চার ছাত্রকে নির্যাতনের তদন্তও শেষ হচ্ছে না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের চার ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিও তদন্ত শেষ করতে পারেনি। কমিটি বলছে, চার ছাত্রের একজনকে বারবার চিঠি পাঠিয়েও কোনো জবাব না পাওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি হচ্ছে।

গত ২১ জানুয়ারি রাতে জহুরুল হক হলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে চার ছাত্রকে ব্যাপক মারধর করেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা নির্যাতনের পর হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে তাঁদের শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। পরদিন পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়। ঘটনা তদন্তে ২৩ জানুয়ারি জহুরুল হক হল প্রশাসন একটি কমিটি করে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এ সময়সীমা ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান হলটির আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগকারী চার ছাত্রের তিনজন এবং অভিযুক্ত সবার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগকারীদের একজনকে তিনবার চিঠি দিয়ে ডাকা হলেও আসেননি। মূলত তাঁর জন্যই তদন্ত প্রতিবেদন আটকে আছে। তাঁকে আবারও চিঠি দেওয়া হবে।

নির্যাতনের শিকার যে ছাত্র তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দেননি, তিনি ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুকিমুল হক চৌধুরী। তাঁর মা প্রথম আলোকে বলেন, অসুস্থ মুকিমুল হাসপাতালে ভর্তি। যে কারণে তিনি কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দিতে পারেননি।