প্রেমের বিয়ে, বিচ্ছেদের পর পেট্রল ঢাললেন সাবেক স্বামী

ফারহানা আক্তার ও মিজানুর রহমানের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিন। ৯ বছর আগে ২০১১ সালে দুই পরিবারের সম্মতিতে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের একটি ছেলেও আছে। কিন্তু ফারহানাকে প্রথম থেকেই মিজানুরের মা–বাবার অপছন্দ। তাই স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান মিজানুর। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ফারহানার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়।

শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় ২৬ বছর বয়সী ফারহানার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

ফারহানার মামা আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ৯ বছর আগে মিজানুরের সঙ্গে ফারহানার পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই ফারহানাকে তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি অপছন্দ করতেন। এ নিয়ে তাঁদের সংসারে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হতো। এভাবে বেশ কয়েক বছর চলে যায়। বছর তিনেক আগে ফারহানাকে তালাক দেন মিজানুর। ফারহানা এ নিয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় মিজানুর কারাগারে ছিলেন। পরে ফারহানার কাছে ক্ষমা চেয়ে জেল থেকে ছাড়া পান মিজানুর। ছাড়া পেয়ে আবারও ফারহানাকে বিয়ে করেন তিনি। কিছুদিন পর আবারও ফারহানার ওপর শুরু হয় মিজানুর ও তাঁর মা–বাবার নির্যাতন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার তাঁরা বটতলা গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে আসেন ফারহানা। পাইকগাছা উপজেলার মালতিয়া গ্রামে বাবার বাড়ি আসার দুই দিন পর বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ পাঠিয়ে আরেকটি বিয়ে করেন মিজানুর।

ফারহানার মামা বলেন, তিন মাস আগে হাসিবুর রহমান নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ফারহানার বিয়ে হয়। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের ভাড়া বাসায় তাঁদের বাসা। কিন্তু মিজানুর হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে আবারও মামলা করেন ফারহানা। ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে শুনানির পর ফারহানার সঙ্গে মিজানুরের বাগবিতণ্ডা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ফারহানার বাসায় আসেন সাবেক স্বামী মিজানুর। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ফারহানার শরীরে পেট্রল জাতীয় পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যান মিজানুর। বাসায় ফেরার সময় তাঁর স্বামী হাসিবুর দুই ব্যক্তিকে দৌড়ে যেতে দেখেন। বাসার কাছে যেতেই তিনি স্ত্রীর চিৎকার শুনতে পান। পরে আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় ফারহানাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ওই রাতেই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়।

বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ফারহানার শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে তাঁর শ্বাসনালির অর্ধেকের বেশি অংশ পুড়ে গেছে।

ফারহানার স্বামী হাসিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফারহানার শরীরে মিজানুর পেট্রল ঢেলে দিয়েছেন। এ কথা তিনি চিকিৎসকদের জানিয়েছেন। এটি ভিডিও করা আছে। তা ছাড়া তালা থানার এক কর্মকর্তা ঢাকায় এসেছেন ফারহানার জবানবন্দি নিতে। কথা বলতে পারলেও তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন।

এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদি হাসান। তিনি প্রথম বলেন, ফারহানার পরিবার দাবি করছে যে তাঁর সাবেক স্বামী মিজানুর এ ঘটনায় জড়িত। গতকাল সোমবার থানায় তাদের পক্ষ থেকে মিজানুরকে আসামি করে মামলা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি নারীর জবানবন্দি নিতে তালা থানার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।