দল চাঙা রাখতে ভোটে বিএনপি

বিএনপির মাঠের নেতাদের কাছে ভোটে যাওয়া কেবলই ‘দলীয় সিদ্ধান্ত’। আর কেন্দ্র বলছে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে, দলকে চাঙা রাখতে এবং সুশীল সামজের একটা প্রচ্ছন্ন চাপ অনুভব থেকেও দলটি এখন ভোটে যাচ্ছে। বিএনপি নেতাদের ধারণা, নির্বাচনে ফলাফল মোটামুটি ‘নির্ধারিত’। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, এমন আশা করেন না তাঁরা। তাই এই পরিস্থিতির মধ্যে সরকারদলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটে নেমে বিজয় আসবে, এই বিশ্বাস বিএনপির অনেক নেতাই করেন না।

সামনে পাঁচটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। চসিকে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। এ ছাড়া ঢাকা-১০ আসনে শেখ রবিউল আলম, বাগেরহাট-৪ আসনে কাজী খায়রুজ্জামান, গাইবান্ধা-৩ আসনে সৈয়দ মাইনুল হাসান, যশোর-৬–এ মো. আবুল হোসেন আজাদ ও বগুড়া-১ আসনে এ কে এম আহসানুল তৈয়ব। ঢাকা-১০, বাগেরহাট-৪ ও গাইবন্ধা-৩ আসনে আগামী ২১ মার্চ এবং চসিক, যশোর-৬ ও বগুড়া-১ আসনে ২৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি ও দখলের অভিযোগ করেছে বিএনপি। দুটি নির্বাচনই বিএনপি পুনরায় করারও দাবি জানিয়েছে। তবে বিএনপির নেতারা এ–ও ভাবেন যে তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ার মতো কোনো অবস্থায় সরকার নেই। বরং নির্বাচনে অনিয়ম হবে, এ বিষয় বিশ্বাস করেই তাঁরা নির্বাচনে যাচ্ছেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়া এখন অনেকটা ‘নিয়ম রক্ষার’ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দলটির জন্য। এর বাইরে নতুন নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া, দলীয় নেতা–কর্মীদের চাঙা রাখা ‘বোনাস’ হিসেবে দেখছে। এর শেষ কোথায় বা কী করা যেতে পারে, সেটাও জানে না বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণতন্ত্র বিশ্বাস করি, সুশীল সমাজ নানা কথা বলে, তাই নির্বাচনে যাই। কিন্তু নির্বাচন এখন অর্থহীন হয়ে গেছে।’ দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, নির্বাচন না করলে দল থাকবে না। তাই এভাবেই চলতে হবে।

বিএনপি নির্বাচনকে সাংগঠনিক ভিত্তি যাচাই ও নেতা–কর্মীদের রাজনীতির মধ্যে রাখার বিষয় হিসেবেই নিয়েছে। ঢাকা সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আউয়ালের গণসংযোগে মানুষের অংশগ্রহণ বিএনপি আশা জুগিয়েছিল। যদিও নির্বাচনের দিন বিএনপির সেই নেতা–কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। বিএনপি ঢাকার নির্বাচনে দুই তরুণ নেতৃত্ব উঠে আসাকে অন্যতম বড় পাওয়া হিসেবে দেখছে। সামনের নির্বাচনেও যদি এ রকম কেউ উঠে আসেন, সেটাও বিএনপির জন্য লাভজনক হবে বলে তারা মনে করে। সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু করবে না এবং নির্বাচন যে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হয়, তা প্রমাণ করাও বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য। বহির্বিশ্বে আওয়ামী লীগের নেতিবাচক ভাবমূর্তিও তারা তুলে ধরতে চায়।

সাংগঠনিক ভিত্তি জোরদার করতে বিএনপি আগের নির্বাচনে নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো মাথায় রেখে সামনের উপনির্বাচন ও চসিক নির্বাচনে কর্মীদের আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা নির্বাচনের ভুলত্রুটিগুলো চিন্তা করে চট্টগ্রাম ও উপনির্বাচনের জন্য কর্মীদের সেশন নেওয়া হবে। ভোটের দিনের পরীক্ষাই আসল পরীক্ষা। সেদিন যে দায়িত্বপ্রাপ্তরা মাঠে থাকেন, তাঁদের ওরিয়েন্টেশন হবে।

বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বিএনপির নেতা–কর্মীরা মাঠে থাকেননি, এমন অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দলের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন সিটি নির্বাচনে বিএনপির সব নেতা সমানভাবে কাজ করেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন–পরবর্তী কাজের মূল্যায়নবিষয়ক এক সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। ঢাকার নির্বাচনে বিএনপি মহানগর পর্যায়ে নেতা–কর্মীরা মাঠে থাকেননি বলে দলেই অভিযোগ রয়েছে। ইশরাক নিজেও ভোটের দিন অনেক কেন্দ্রে গিয়ে নিজের কোনো এজেন্ট পাননি।

এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, দলের মধ্যে কিছু বিষয় তো থাকেই। তবে নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে এসব হতো না। সবাই তো সব মোকাবিলা করতে পারে না। সবার সাহস এক থাকে না। কিন্তু সুষ্ঠু পরিবেশ ও ভয়ভীতি না থাকলে সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করত। কেউ দায়িত্ব এড়াত না। বর্তমান সরকার যত দিন ক্ষমতায় আছে, তত দিন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সরকার লিবারেল চিন্তা করে না। সহজে ছাড়বে না।