নিতি ও একটি চিরকুট

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দাদি ঘরে ঢুকে দেখেন, ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছে ১১ বছরের নিতির নিথর দেহ। ওই ঘর থেকে উদ্ধার হয় একটি চিরকুট। চিরকুটের প্রতিটি শব্দে গভীর অভিমানের সুর। পুলিশের ধারণা, চিরকুটটি মৃত্যুর আগে নিতিই লিখেছে। তবে এটা আত্মহত্যা, নাকি হত্যা, তা নিশ্চিত হতে আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিতি আক্তারের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামে। স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত সে।

পুলিশ, নিতির পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর আগে আন্ধারুপাড়া গ্রামের মো. আল আমিনের সঙ্গে বিয়ে হয় ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনানী বাজারের ইয়াসমিন আক্তারের। বিয়ের চার বছর পর তাঁদের সংসারে নিতির জন্ম হয়। ২০১৪ সালে নিতির বাবা আল আমিন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এক বছর পর ২০১৫ সালে আল-আমিনের সঙ্গে নিতির মা ইয়াসমিনের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। পরে নিতির মা আরেকজনকে বিয়ে করে স্বামী নিয়ে রাজধানী ঢাকায় চলে যান। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। নিতির বাবাও দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে রং মিস্ত্রির কাজ করেন। বিচ্ছেদের পর মা-বাবা তাঁদের দ্বিতীয় সংসারে নিতিকে সঙ্গে রাখতে না চাইলে সে তিনানী বাজারে নানা-নানির কাছে থাকতে চায়। কিন্তু নানা-নানি রাখতে অপারগতা প্রকাশ করলে নিতির ঠাঁই হয় দাদি লাল বানুর কাছে।

পুলিশ বলছে, গতকাল সন্ধ্যায় দাদি ঘরের বাইরে ছিলেন। পরে ঘরে ফিরে তিনি দেখতে পান, ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না গলায় প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলছে নিতির লাশ। এ দৃশ্য দেখে দাদি চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে নিতির লাশ উদ্ধার করে।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বলেন, ‘আমরা নিতির লেখা চিরকুট ও তার লেখাপড়ার খাতা মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, চিরকুটটি নিতিই লিখেছে। নিতির চিরকুটের লেখা ধরে তদন্ত চলছে।' ওসি জানান, আজ বুধবার নিতির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।

নিতির মৃত্যুতে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি কর্মকর্তা মাধবী রানী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিষয়টি সত্যি দুঃখজনক। শুধু শহর অঞ্চলে নয়, মফস্বল এলাকাগুলোতেও বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে। এতে শিশুরা মা–বাবার স্নেহ ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, বিবাহবিচ্ছেদসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দূর করতে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে।