রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৮ কোটি ডলার চাইবে জাতিসংঘ

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা বসতি। প্রথম আলো ফাইল ছবি
কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা বসতি। প্রথম আলো ফাইল ছবি

জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বা যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনার (জেআরপি) আওতায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় ৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার চাইবে জাতিসংঘ। অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও জেআরপিতে প্রথমবারের মতো ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি যুক্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে সংশোধিত তহবিল বা বিশেষ আবেদনের ভিত্তিতে ভাসানচরের জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা বলেছে জাতিসংঘ।

উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে জেআরপির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। এই তহবিলে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটের একটি অংশও বরাদ্দ থাকে। জেআরপির বাইরে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা সহায়তা দিয়ে আসছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী ভাসানচরের পাশাপাশি রাখাইনে জাতিসংঘ কী করছে, তা প্রথমবারের মতো এবারের জেআরপিতে প্রতিফলিত হয়েছে। যদিও প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, সেটা স্পষ্ট করে জেআরপিতে বলা হয়নি।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, এবারের জেআরপিতে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী মিলিয়ে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের জন্য এবার ৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চাহিদা ধরা হয়েছে। আগামী ৩ মার্চ জেনেভায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ওই তহবিলে সহায়তার আহ্বান জানানো হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, খাবার, আবাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ ১২ খাতের জন্য জাতিসংঘ ওই অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। এবারও সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে খাবারের জন্য। এ খাতে বরাদ্দ ২৫ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। পানি ও পয়োনিষ্কাশনে ১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার এবং আশ্রয় কর্মকাণ্ডে ১১ কোটি ১২ লাখ ডলার। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, শিক্ষায় ৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার, পুষ্টিতে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ডলার চাহিদার বিষয়টি এসেছে জেআরপিতে।

>উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে তহবিল আহ্বানের বৈঠক ৩ মার্চ জেনেভায়
জেআরপিতে ভাসানচর আছে, বাজেট বরাদ্দ নেই


ভাসানচর ও রাখাইন প্রসঙ্গ
বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের চাপ কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নেয়। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ওই দ্বীপে নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জেআরপিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের গঠনমূলক আলোচনা অব্যাহত থাকবে। ২০১৮ সালের শুরু থেকেই সরকার ওই প্রকল্পের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ও দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছে। তবে চলতি বছর ভাসানচরে পুনর্বাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, বাসযোগ্যতা এবং সম্ভাব্যতা নিয়ে কারিগরি ও সুরক্ষাসংক্রান্ত বিস্তারিত সমীক্ষা চালাতে প্রস্তুত জাতিসংঘ। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের যুক্ত হওয়া সাপেক্ষে ২০২০ সালের সংশোধিত জেআরপি কিংবা বিশেষ আবেদনের ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ হতে পারে।

তবে ভাসানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গা সরানোর বিষয়ে সরকার এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

জেআরপিতে এবার প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিসংঘ কী কী কাজ করছে, তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। রাখাইনের রাথিডং, বুথিডং ও মংডুতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জাতিসংঘের শিশু তহবিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এবং ইউএনউইমেন কাজ করছে।