রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ: মুক্তিপণ আদায় করতে মারধর করতেন পাপিয়া

শামীমা নূর পাপিয়া
শামীমা নূর পাপিয়া

শামীমা নূর ওরফে পাপিয়া তাঁর নরসিংদীর বাসায় এক ব্যবসায়ীকে ধরে এনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। তিন দিন সেখানে আটকে রেখে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে মুক্তি দেন। ঘটনার শিকার ওই ব্যবসায়ী প্রথম আলোর কাছে এই অভিযোগ করেন। তিনি নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক।

পাপিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কায়কোবাদ কাজী প্রথম আলোকে বলেন, জোর করে আটকে রেখে শুধু মুক্তিপণ আদায়ই নয়, পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মাদক ব্যবসা করতেন। তদবিরের নামেও তাঁরা অনেক লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে এসব বিষয় তাঁরা স্বীকারও করেছেন।

পাপিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় অর্থ পাচার ও জাল টাকা রাখার ঘটনায় একটি মামলা এবং শেরেবাংলা নগর থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হয়। মামলার অপর দুই আসামি পাপিয়ার সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা। পাপিয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা অবস্থায় বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২২ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন। ধরা পড়ার পর তাঁকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ১৫ দিনের রিমান্ডে পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। গতকাল ছিল রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন।

পাপিয়া যাঁকে অপহরণ করেছিলেন, সেই ব্যবসায়ীর নাম টোকন তালুকদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পাপিয়ার আস্তানায় ১০ নারী ও ২০ জন পুরুষ সহযোগী থাকে। কাউকে আটক করার পর সেখানে নিয়ে এদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তোলা হতো। এরপর সেই ছবি দেখিয়ে টাকা আদায় করা হতো। না দিলেই শুরু হতো মারধর।

টোকন তালুকদার বলেন, নরসিংদীতে সাইফুল বারী নামের এক ব্যক্তির কাছে তিনি কিছু টাকা পেতেন। সেই টাকা আদায় করতে গেলে সাইফুল পাপিয়াকে তাঁর বোন পরিচয় দিয়ে সেই বাসায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তোলেন। এরপর ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে না চাইলে পাপিয়া তাঁকে মারধর করেন। তাঁর কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। তিন দিন আটকে রাখার পর স্বজনদের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকের নরসিংদী শাখায় জমা দিয়ে তিনি ছাড়া পান।

টোকন আরও বলেন, গত মঙ্গলবার এ নিয়ে বিমানবন্দর থানায় তিনি মামলা করতে গেলে পুলিশ তাঁর মামলা নেয়নি। তবে পাপিয়াকে তাঁর সামনে আনা হয়। তখন পাপিয়া বলেন, যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় নেত্রীর নির্দেশেই তিনি টোকনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন।

ঘটনাটি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থল নরসিংদী হওয়ায় টোকনকে নরসিংদীতে মামলা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।