বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, অস্ত্রোপচার বন্ধ ৬ বছর

পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি গতকাল ময়মনসিংহ জেলা শাখার আয়োজনে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করে।  ছবি: প্রথম আলো
পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি গতকাল ময়মনসিংহ জেলা শাখার আয়োজনে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করে। ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে ছয় বছর ধরে অস্ত্রোপচার কক্ষ তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। বছরের পর বছর তালাবদ্ধ থাকায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগীরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, অস্ত্রোপচার কক্ষ চালু রাখতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবল দরকার। কিন্তু পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে ২০১৪ সাল থেকে অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধ রয়েছে। সব ধরনের চিকিৎসা শুধু মেডিকেল অফিসার দিয়ে দিতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় অস্ত্রোপচার কক্ষের দরজায় তালা লাগানো। ছয় বছর ধরে এভাবেই পড়ে রয়েছে অস্ত্রোপচার কক্ষটি। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, শিশু রোগীদের কোলে নিয়ে অভিভাবকদের দীর্ঘ সারি। তাঁরা শিশুদের চিকিৎসক দেখাবেন। কিন্তু পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। মেডিকেল অফিসার সাবিহা সুলতানা শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তাই আমরাই চিকিৎসা দিচ্ছি। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ শিশু রোগী আসে চিকিৎসা নিতে। জটিল কোনো শিশু রোগী থাকলে আমরা জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করে দিই।’

একই অবস্থা গাইনি বিভাগেও। মেডিকেল অফিসাররাই রোগী দেখছেন। পুরো বহির্বিভাগের কোথাও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া গেল না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা নেন। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। কিন্তু এসব রোগীকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার জন্য যতজন চিকিৎসক প্রয়োজন, তা এখানে নেই। ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী এখানে একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থো-সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চর্ম ও যৌন) থাকার কথা। কিন্তু অনেক বছর ধরে এসব বিশেষজ্ঞ পদের কোনো চিকিৎসক নেই। 

গত শুক্রবার রাতে ইসলামপুরের পলবান্দা ব্যাপারীপাড়া গ্রাম থেকে মো. তিজল ভান্ডার পেটের ব্যথা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। তাঁকে মেডিকেল অফিসাররা চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। তিনি বলেন, শনিবার সকালে একজন মেডিকেল অফিসার এসেছিলেন। কিন্তু কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তিনি দেখেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ এ এম আবু তাহের বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবেই অস্ত্রোপচার কক্ষ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। পুরো হাসপাতাল মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালাতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অস্ত্রোপচার কক্ষ চালুর বিষয়ে গত মাসেও সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে।

যোগাযোগ করলে সিভিল সার্জন গৌতম রায় বলেন, সারা জেলার কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এটা ব্যাপক সমস্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে প্রতি মাসেই লিখিতভাবে জানানো হয়। তাঁদের মতো তিনিও প্রতি মাসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানান।