ফুল ও প্রকৃতির মাঝে পাঠদান

মাগুরার শিরিজদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাদের বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। এখানে শিশুরা বড় হচ্ছে আনন্দময় পরিবেশে। প্রথম আলো
মাগুরার শিরিজদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাদের বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। এখানে শিশুরা বড় হচ্ছে আনন্দময় পরিবেশে। প্রথম আলো

জবা, হাসনাহেনা, গাঁদা, গোলাপ, জুঁই, চামেলি, বেলি, রজনীগন্ধা—এমন প্রায় ৫০ রকমের ফুলের গাছ শোভা পাচ্ছে শিরিজদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে।

মাগুরা সদর উপজেলার এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুরা বড় হচ্ছে এমনই এক ফুলেল পরিবেশে, যেখানে পাখিদের জন্য রয়েছে অভয়ারণ্য ও নিরাপদ বাসস্থান। শিশুবান্ধব একটি পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

শহর থেকে বিদ্যালয়টির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। গত সপ্তাহে সরেজমিনে দেখা যায়, রঙিন বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা বিদ্যালয় চত্বর। মাঝখানে ছোট্ট একটি খেলার মাঠ। এর পাশে দেয়াল ঘেঁষে লাগানো হয়েছে দেশি-বিদেশি ফুলের গাছ। তবে বিদ্যালয়ে ঢুকতেই চোখ আটকে যায় ছাদের দিকে। সেখানে রঙিন টবে ঝুলছে জানা-অজানা নানা রকমের ফুলের গাছ। সিঁড়ি মাড়িয়ে ছাদে উঠে চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্যে। জবা, হাসনাহেনা, গাঁদা, গোলাপ, জুঁই, চামেলি—কী নেই সেখানে। ছাদের রেলিংয়ে স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে মাটির হাঁড়ি, যেখানে পাখিরা তাদের নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করতে পারবে। এ ছাড়া পাখিদের তৃষ্ণা মেটাতে ছাদের এক কোণে রয়েছে জলাধার।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮০ সালে স্থানীয় উদ্যোগে ৩৩ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সালে নিবন্ধিত হওয়ার পর বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয় ২০১৩ সালে। শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০০। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক আছেন পাঁচজন। বিদ্যালয়ে অল্প জায়গার মধ্যে শহীদ মিনার, অভিভাবকদের বসার জায়গা ও শিশুদের সহশিক্ষার জন্য সুবিধাজনক নানা রকম কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন শিশুদের জন্য একটি খেলার মাঠ পেলে বিদ্যালয়টি স্বয়ংসম্পূর্ণ হতো।

প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ এলাহী জানান, বিদ্যালয়ে একটি শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে এসব আয়োজন। তিনি জানান, শিশু শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ তৈরি হচ্ছে এই ছাদে। যেন প্রাকৃতিক পরিবেশে শিশুদের শিক্ষার প্রথম হাতেখড়ি হয়। 

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘প্রতিটি বিদ্যালয় যদি শিরিজদিয়ার এই মডেল কাজে লাগায়, তাহলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর পরিবেশে আমূল পরিবর্তন আসবে।’