'জেলে ত্রিশ বছর' বইটির সন্ধান ৫০ বছর পর

জেলে ত্রিশ বছর  ত্রৈলোক্য নাথ চক্রবর্তী
জেলে ত্রিশ বছর ত্রৈলোক্য নাথ চক্রবর্তী

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সর্বাধিক কারাভোগকারী নেতা মহারাজ ত্রৈলোক্য নাথ চক্রবর্তীর লেখা জেলে ত্রিশ বছর বইটির একটি মুদ্রিত সংখ্যা ৫০ বছর পর সংগৃহীত হয়েছে।

স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা চেতনা, পরিবেশ ও মানব উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মুছার মাধ্যমে বইটির সন্ধান পায় কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে প্রতিষ্ঠিত মহারাজ ত্রৈলোক্য নাথ চক্রবর্তী স্মৃতি গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। মোহাম্মদ মুছা গতকাল বুধবার সকালে বইটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার আজিজের হাতে তুলে দেন। ইউএনও পদাধিকারবলে গ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

বই হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ নূরে আলম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন ও মহারাজ ত্রৈলোক্য নাথ চক্রবর্তী স্মৃতি গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক অনিল চন্দ্র সাহা।

গ্রন্থাগার সূত্র জানায়, মহারাজ ত্রৈলোক্য নাথ চক্রবর্তী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে অধিক কারাভোগকারী নেতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর বাড়ি কুলিয়ারচরের কাপাসাটিয়া গ্রামে। মহারাজের লেখা জেলে ত্রিশ বছর বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে। বইটি সেই সময়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং পাঠকনন্দিত হয়। পরে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার বইটি বাজেয়াপ্ত করে। এরপর থেকে বইটি সহজলভ্য ছিল না। মহারাজের লেখা বইগুলোর মধ্যে এ বই সর্বাধিক আলোচিত হলেও পৈতৃক নিবাসে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত গণগ্রন্থাগারে এত দিন তা ছিল না। একটি ফটোকপি সংরক্ষণ করা হয়েছিল। গ্রন্থাগারের পক্ষ থেকে মুদ্রিত সংখ্যা সংগ্রহের চেষ্টা চলেছে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অনিল চন্দ্র সাহা জানান, পুরো কুলিয়ারচরে কেবল তাঁর কাছে একটি মুদ্রিত সংখ্যা ছিল, সে–ও ১৯৬৯ সালের কথা। সেই সময় পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পড়ার জন্য তাঁর কাছ থেকে বইটি নিয়ে আর ফেরত দেননি। এরপর থেকে বইটির মুদ্রিত কপি হারিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘একশ্রেণির পাঠকের কাছে বইটির এখনো কদর রয়েছে। দেশের ও পশ্চিমবঙ্গের অনেকে বইটি পেতে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

দীর্ঘদিন পর বইটি পেয়ে ও সংগ্রহ করতে পেরে বেশ আনন্দিত মোহাম্মদ মুছা। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বইমেলায় একটি স্টলে বইটি দেখতে পেয়ে পুলকিত হই। এরপর সংগ্রহ করি। ওই স্টলে একটিমাত্র কপি ছিল। তখনই বইটি গ্রন্থাগারে দেওয়ার চিন্তা করি। আমি মনে করি, বইটি সংগ্রহে থাকায় মহারাজের অমূল্য এক সম্পদ সংরক্ষিত হলো।’

মোহাম্মদ মুছার পরামর্শ, বইটি টিকিয়ে রাখতে পুনর্মুদ্রণ জরুরি, না হলে পিডিএফ ফাইলের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। তা না হলে এই কপিও হয়তো বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না।

বইটি সংগ্রহ করায় এবং গ্রন্থাগারে তুলে দেওয়ায় মোহাম্মদ মুছাকে ইউএনও ধন্যবাদ জানান। সংগৃহীত বইটির প্রকাশক দ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন।