দগ্ধ দুজনকে চেনাই যাচ্ছে না

রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার দিলু রোডের একটি ভবনে আগুনের ঘটনায় নিহত তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন আবদুল কাদের (৪৫), আফরিন জান্নাত (১৭) ও এ কে এম রুশদী (৫)।

মগবাজারের দিলু রোডের এই ভবনে ভোররাত চারটার দিকে আগুন লাগে। ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
মগবাজারের দিলু রোডের এই ভবনে ভোররাত চারটার দিকে আগুন লাগে। ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

চিকিৎসক ও পুলিশ বলছে, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে আবদুল কাদের ছাড়া বাকি দুজনের শরীর একেবারে পুড়ে গেছে। তাদের চেনা যাচ্ছে না। অন্য কোনো দাবিদার না থাকায় দুই পরিবারের কাছে লাশ দুটি হস্তান্তর করা হবে। অবশ্য এই দুটি লাশের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হবে। ফলে, কোনো সমস্যা হবে না।

অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আফরিন জান্নাত (১৭) মারা গেছেন। ছবি: সংগৃহীত
অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আফরিন জান্নাত (১৭) মারা গেছেন। ছবি: সংগৃহীত

আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া আবদুল কাদেরের বাবার নাম মোহাম্মদ উল্লাহ। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম নন্দনপুর গ্রামে তাঁদের বাড়ি। তিনি ওই ভবনের নিচতলায় অবস্থিত ‘ক্ল্যাসিক ফ্যাশন’ বায়িং হাউসের অফিস সহকারী ছিলেন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্ত্রী মরিয়ম বেগম। তাঁরা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। কাদের তাঁর কর্মস্থলেই থাকতেন। মর্গে তাঁর স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন।

মৃত এ কে এম রুশদীর বাবার নাম শহিদুল। মা জান্নাতুল ফেরদৌসী। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ইটনা গ্রামে বাড়ি। লাশ শনাক্ত করেন শিশুটির দাদা এ কে এম শহিদুল্লাহ। এ আগুনের ঘটনায় মৃত রুশদীর মা-বাবা উভয়ই দগ্ধ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁরা চিকিৎসাধীন।

মৃত আফরিন জান্নাত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪২) পূর্ত ভবনের প্রশাসনিক সেকশনে চাকরি করেন। তার মা লাল বানু (৩৫) গৃহিণী। তাঁরা ওই ভবনের ছাদের একটি রুমে থাকেন।

ভবনের এই গ্যারেজ থেকেই আগুনের সূত্রপাত। আগুনে একাধিক গাড়ি পুড়ে যায়। দিলু রোড, মগবাজার, ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
ভবনের এই গ্যারেজ থেকেই আগুনের সূত্রপাত। আগুনে একাধিক গাড়ি পুড়ে যায়। দিলু রোড, মগবাজার, ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

আফরিনের চাচা মো. সুরুজ্জামান বলেন, আগুন লাগার খবরে আতঙ্কিত হয়ে আফরিন সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে নামে। আর ওপর থেকে বাবা ও ভাই গ্রিল বেয়ে নামেন। তাঁরা দুজনেই সামান্য আহত হন। আফরিনের মা নামতে গিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাঁর পা ও কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তিনি পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি।

চাচা ও বাবার ধারণা, দগ্ধ কিশোরীটি তাঁদেরই মেয়ে। বাবা বলেন, ‘আমরা ছাদ থেকে পাশের ভবনে লাফিয়ে পড়ি। আমাদের আগেই মেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে চলে যায়। এটা আমারই মেয়ে।’

মায়ের কোলে শিশু এ কে এম রুশদী। অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে সে। ছবি: সংগৃহীত
মায়ের কোলে শিশু এ কে এম রুশদী। অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে সে। ছবি: সংগৃহীত

হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খন্দকার সেলিম শাহরিয়ার জীবন স্টালিন বলেন, মৃত তিনজনের মধ্যে শিশুসহ দুজন পুরোপুরি পুড়ে গেছে, যা দেখে শনাক্ত করার মতো না। তাই পোড়া দুজনেরই ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহের জন্য ফরেনসিক বিভাগকে বলা হয়েছে। আর আবদুল কাদের পোড়েননি। সম্ভবত তিনি ধোঁয়ার কারণে মারা গেছেন।’

এসআই শাহরিয়ার বলেন, পুড়ে যাওয়া লাশের দাবিদার যাঁরা, তাঁদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হচ্ছে। একাধিক দাবিদার নেই। এ কারণে তাঁদের কাছেই দেওয়া হচ্ছে।