'কাটা হলে শত গাছ, ক্যাম্পাসের সর্বনাশ'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছ ও পাহাড় কাটার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছ ও পাহাড় কাটার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের আশপাশে নির্বিচারে গাছ ও পাহাড় কাটার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হয়। ১২টায় মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি শেষ হয় বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘কাটা হলে শত গাছ, ক্যাম্পাসের সর্বনাশ’, ‘বন উজাড় বন্ধ করো, চবিকে রক্ষা করো’ লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী দেওয়ান তাহমিদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের রিটু রায়, নাট্যকলা বিভাগের মুশফিক উদ্দিন, দর্শন বিভাগের সোহেল রানা প্রমুখ। বক্তারা বলেন, বহু বছর ধরে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকা থেকে গাছ কাটা হচ্ছে। গাছ নিয়ে যেতে পাহাড় কাটা হয়েছে। সর্বশেষ প্রথম আলোয় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে সাত হাজারের বেশি গাছ কাটা হয়েছে। এখনো গাছ কাটা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের এই মহাযজ্ঞের অবসান করতে হবে। কারণ, এ পাহাড়-প্রকৃতির জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশব্যাপী পরিচিত।

বক্তারা আরও বলেন, গাছ কাটায় জড়িত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ নেই। ক্ষোভ হলো চক্রের মূল হোতাদের প্রতি। বেশির ভাগ সময় কাটা গাছ নিয়ে যাওয়া হয় রাতের বেলা। এখন থেকে শিক্ষার্থীরা এসব গাড়ি আটকে দেবে। নয়তো এ ক্যাম্পাসকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। এ ছাড়া একটি দেশে ২৫ শতাংশ বনায়ন থাকতে হয়। কিন্তু এ দেশে তা নেই। যেটুকু বন-পাহাড় রয়েছে, সেটুকুও ধ্বংস করা হচ্ছে।

এর আগে গত শনিবার প্রথম আলোয় ‘চার বছরে সাত হাজার গাছ সাবাড়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর এক দিন পর পাহাড় ও গাছ কাটার বিষয়টি প্রতিরোধ করতে গঠিত কমিটির তিন সদস্য পদত্যাগ করেন। ক্যাম্পাসের বনজ গাছপালা সংরক্ষণ ও গাছসহ যেকোনো ধরনের দ্রব্যাদি ক্যাম্পাসের বাইরে নেওয়া এবং নির্বিচারে গাছ কাটার বিষয়টি প্রতিরোধ করতে গত ২৯ জানুয়ারি এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ ছাড়া সংবাদের সূত্র ধরে গত সোমবার ক্যাম্পাসের আশপাশে অভিযান চালায় অধিদপ্তরের দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল। অভিযানে পাহাড় ও গাছ কাটার প্রমাণ পায় তারা। প্রমাণের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা, নিরাপত্তা দপ্তর, গাছ ব্যবসায়ী মো. হানিফ ও মো. বজলুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় পরিবেশ অধিদপ্তর।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছ ও পাহাড় কাটার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছ ও পাহাড় কাটার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো


শিক্ষার্থীদের সাত দফা
অবৈধভাবে গাছ ও পাহাড় কাটায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবি স্মারকলিপি আকারে প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসানকে দেওয়া হয়। আগামী এক মাসের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়িত না হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামবেন বলে জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের সাত দফা হলো সৌন্দর্যবর্ধন; রাস্তা সম্প্রসারণের অজুহাতে ক্যাম্পাসের কোনো স্থানে গাছ কাটা যাবে না; গাছ কেটে ক্যাম্পাসে রাখা ও ক্যাম্পাসের ওপর দিয়ে গাছ পরিবহনের অনুমতি দেওয়া যাবে না; গাছ কাটা প্রতিরোধ ও পরিবেশ রক্ষায় অবিলম্বে আরও একটি কমিটি করতে হবে এবং তা কার্যকর রাখতে হবে; ক্যাম্পাসের বাইরের বন-পাহাড়ে গাছ কাটা প্রতিরোধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে; আগামী এক বছরের মধ্যে ক্যাম্পাসের সব বিলুপ্তপ্রায় এবং বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের তালিকা করতে হবে; মাটি, পানি, বাতাস তথা বনজ এলাকার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় ইউক্যালিপটাসসহ কোনো প্রকারের বিদেশি প্রজাতির বনায়ন করা যাবে না এবং অবৈধভাবে গাছ কাটা ও তা পরিবহনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত চার বছরে ক্যাম্পাসের আশপাশের পাহাড়ি এলাকা থেকে অন্তত সাত হাজার গাছ কাটা হয়। গাছ নিতে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা।