বছর না যেতেই জেটি ভরাট

কক্সবাজারের মহেশখালী জেটিতে ভাটার সময় নৌযানে ওঠানামা করতে গিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। গত শনিবার বিকেলে।  প্রথম আলো
কক্সবাজারের মহেশখালী জেটিতে ভাটার সময় নৌযানে ওঠানামা করতে গিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। গত শনিবার বিকেলে। প্রথম আলো

কক্সবাজারের মহেশখালী জেটিঘাট খনন করার এক বছর যেতে না–যেতেই আবারও ভরাট হয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলের পাশাপাশি খালে পলি জমে যাওয়ার কারণে জেটিঘাটের এই দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ওই জেটিঘাট দিয়ে ভাটার সময় কাদা পাড়ি দিয়ে স্পিডবোটে উঠতে হয় যাত্রীদের। এতে স্থানীয় নৌযাত্রী ও পর্যটকেরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।

তবে অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নৌপথের যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে জেটিঘাট খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার গোরকঘাটায় বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী চ্যানেলের একটি খালের মুখে ১৯৮৮ সালে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই জেটি নির্মিত হয়। ৫০০ মিটার দীর্ঘ ও ৩ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের এই জেটির সামনের অংশ ভরাট হয়ে পড়ায় ২০০০ সালে ১০০ মিটার সম্প্রসারণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ১ কোটি টাকা। তবে এরপরও জেটির সামনের অংশ ভরাট হয়ে যায়। যাত্রীদের ওঠা-নামার সুবিধার্থে দেড় বছর আগে জেটিঘাটটির সামনের অংশ খনন করা হয়েছিল। কিন্তু ছয় মাস আগে জেটিঘাটে আবারও পলি জমে যায়।

গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভরাট হয়ে যাওয়া জেটিঘাটের সামনে প্রায় তিন থেকে চার শ মিটারজুড়ে কাদা। মহেশখালী-কক্সবাজার রুটের যাত্রীরা ঘাট থেকে ওই পথ পাড়ি দিয়ে উঠছেন স্পিডবোটসহ বিভিন্ন নৌযানে। কাদা পেরিয়ে নৌযানে উঠতে গিয়ে নাকাল হচ্ছেন তাঁরা। আবার নৌযান তীরে ভেড়ার পর যাত্রীরা কাদায় ঢাকা পথ পাড়ি দিয়ে জেটিঘাটে উঠছেন।

ঢাকা যাত্রাবাড়ি থেকে আসা পর্যটক বিমল কান্তি দে বলেন, ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে তিনি কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিলেন। সোমবার দুপুরে তিনি মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরে আসেন। কিন্তু বিকেলে কক্সবাজার ফেরার পথে জেটিঘাটে আটকা পড়েন। পলি পড়ে যাওয়ায় নৌযান জেটিতে ভিড়তে পারছিল না। ফলে নিরূপায় হয়ে তিনি কাদা পথ পাড়ি দিতে আরেকটি নৌকা ভাড়া করেন। কাদায় নৌকা ঠেলে স্পিডবোটে পৌঁছে দেওয়া হয়।

স্পিডবোট চালক মোস্তফা কামাল বলেন, ছয় মাস আগেও ভাটার সময় জেটিতে সরাসরি স্পিডবোট ভিড়তে পারত। এখন ভাটার সময় জেটিতে নৌযান ভিড়তে পারছে না।

কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, দেড় বছর আগে জেটিঘাটটি খনন করা হয়েছিল। খননের পর ভাটার সময়ও নৌযান সহজেই জেটিঘাটে ভিড়েছে। ওঠা-নামা করতে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি।

মহেশখালী-কক্সবাজার রুটে টোল আদায়ে দায়িত্বরত রফিকুল ইসলাম বলেন, দিনে অন্তত তিন হাজার মানুষ এই জেটি দিয়ে আসা-যাওয়া করে। জেটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।

বিআইডব্লিউটিএর সহকারী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, দেড় বছর আগে জেটিটি ড্রেজার দিয়ে খনন করা হয়েছিল। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পলি মাটি আর পাহাড়ি ঢলে আবারও ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে ওই জেটিঘাট দিয়ে যাত্রীরা পারাপার করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে। যাত্রীদের জেটিঘাটে ওঠা–নামার সুবিধার্থে আবারও এক সপ্তাহ ধরে খালটি খনন করা হচ্ছে।

সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে জেটিঘাটের দুরবস্থার বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে জানিয়েছি। পরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী নির্দেশেই আবারও খননের কাজ শুরু হয়েছে। আর ভবিষ্যতে এই জেটি দিয়ে ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে।’

সাংসদ আরও বলেন, মহেশখালীকে ঘিরে নানা উন্নয়ন কাজ চলছে। তাই ১০ বছরের মধ্যে মহেশখালী-কক্সবাজার সংযোগ সেতু নির্মাণের মহাপরিকল্পনা রয়েছে।