সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা, ২৬ রোহিঙ্গা উদ্ধার

রোহিঙ্গাদের সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় প্রায়ই। ছবি: এএফপি
রোহিঙ্গাদের সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় প্রায়ই। ছবি: এএফপি

সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার সময় কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালী উপজেলায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ২৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ জন এবং রাত ১০টায় মহেশখালী চ্যানেলে ও পৌর এলাকার গোরকঘাটা বাজার থেকে ১৬ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।

টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গা উদ্ধারের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক মোহাম্মদ লিয়াকত আলী।

উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা উখিয়ার কুতুপালং ও জামতলি রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন, উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের ইয়াসমিন বেগম (৩০), দিলরুবা আক্তার (১৪), আমিনা খাতুন (১৮), মোহাম্মদ হোসেন (৩৯), জামতলি রোহিঙ্গা শিবিরের নূর মোহাম্মদ (৩৮), মোহাম্মদ পেটান (২৪), রশিদা বেগম (১৫), হামিদা বেগম (১৬), ইমতিয়াজ বেগম (২০) ও নুর কায়দা (০৮)।

লিয়াকত আলী জানান, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এক শিশু, ছয় নারী ও তিনজন পুরুষ রয়েছেন। উখিয়ার কুতুপালং ও জামতলি রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির থেকে কিছু দালাল চক্রের সদস্য রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে শরণার্থীশিবির থেকে বের করে আনে। রাতে তাদের সাগরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা বলে বাহারছড়ার বিভিন্ন এলাকায় জড়ো করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে। তবে এ ঘটনায় কোনো দালাল চক্রের সদস্যকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দালাল চক্রের লোকজন পালিয়ে যায়।

উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানান, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত নিকট আত্মীয়স্বজন তাঁদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ জন্য দালালদের সঙ্গে জনপ্রতি আড়াই লাখ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছে। আগাম হিসেবে জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন দালাল চক্রের সদস্যরা। এসব টাকার লেনদেন হচ্ছে মালয়েশিয়া থেকে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজন টেকনাফ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বেপরোয়া হত্যা-নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশ সরকার মানবতার পরিচয় দিয়ে তাদের এ দেশে আশ্রয় দিয়েছে। এখন সেই রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলাকে ভাবিয়ে তুলেছে।

আবুল হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছিল। এরপর সরকার হার্ডলাইনে চলে গেলে মানব পাচার বন্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু গত বছর থেকে রোহিঙ্গারা আবারও সমুদ্রপথে ট্রলারে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ১৩৮ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ২১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ৭৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও এখনো নিখোঁজ ৪৪ জন।

গত বছরের ১ মার্চ থেকে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টাকালে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন থেকে ৪২ দফায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ১ হাজার ৪২ জন শিশু, নারী ও পুরুষকে উদ্ধার করেছে। এসব ঘটনায় ৪৬ জন দালালের সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জন রোহিঙ্গা এবং ৬ জন বাংলাদেশি।

মহেশখালীতে ১৬ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার
কক্সবাজারের মহেশখালী চ্যানেল ও পৌর এলাকার গোরকঘাটা বাজার থেকে মালয়েশিয়াগামী ১৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রাত ১০টায় পৃথক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করা হয়।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাস চন্দ্র ধর। তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯ জন নারী ও ৭ জন পুরুষ। এ ঘটনায় পুলিশ এক দালালকে আটক করেছে। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের আজ শুক্রবার সকালে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

মহেশখালী থানা-পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাতে মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাবোঝাই বেশ কয়েকটি নৌকা নিয়ে কক্সবাজার থেকে মহেশখালী আসছিল। স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় তাদের নৌপথে মহেশখালীতে আসার খবর পান প্রথমে মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জামিরুল ইসলাম। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মহেশখালী থানা-পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করার পর রোহিঙ্গা নাগরিকদের উদ্ধারের জন্য মাঠে নামে পুলিশ। মহেশখালী থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ নৌপথে মহেশখালী চ্যানেলে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের সদস্যরা ১০ জন রোহিঙ্গাসহ এক দালালকে আটক করেন।
এদিকে একই সময়ে পৌর মেয়র মকছুদ মিয়া পৌর এলাকার গোরকঘাটা বাজার এলাকা থেকে ছয়জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করে।
পুলিশ জানিয়েছে, সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য এসব রোহিঙ্গাকে একটি দালাল চক্র মহেশখালী নিয়ে আসছিল।

১২ ফেব্রুয়ারি উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের কালালিয়া কাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয়জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ একটি মাছ ধরার নৌকাসহ চারজন দালালকে আটক করে।