হলকক্ষে শিক্ষার্থীকে আটকে নির্যাতন: ২ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তদন্তে নতুন করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সাময়িক বহিষ্কার হওয়া দুই ছাত্র হলেন বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তাহমিদ জামান ওরফে নাভিদ এবং ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আল সামাদ ওরফে শান্ত। তাঁরা দুজনই ছাত্রলীগের পরিচয়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিনের নির্দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি নতুন আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খোরশেদ আলমকে। অন্য দুই সদস্য হলেন শের-ই-বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষক সাদমান শাকিব বিন রহমান এবং সহকারী প্রক্টর সুপ্রভাত হালদার।
এর আগে গত মঙ্গলবার শের-ই-বাংলা হলের একটি কক্ষে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে পরের দিন বিকেলে তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। শের-ই-বাংলা হলের ওই ঘটনা তদন্তে হলের আবাসিক শিক্ষক ইয়াসিফ আহমদকে আহ্বায়ক এবং একই হলের আবাসিক শিক্ষক মো. সোহেল রানা ও মো. সাইফুল ইসলামকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। এই কমিটিকেও পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস দুই ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ জালাল ইয়ামিন নামে এক শিক্ষার্থী ওই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২৬ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অভিযোগে শাহ জালাল উল্লেখ করেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে শাহ জালালকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের ১০০১ নম্বর কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে মুখ বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য তাঁর বিশেষ ক্ষমতাবলে ওই দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছেন। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আর সিন্ডিকেট এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।

নির্যাতনের শিকার শাহ জালাল জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি শের–ই–বাংলা হলের ৪০১৬ নম্বর ক‌ক্ষে ছিলেন। এ সময় ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শান্ত তাঁকে জরুরি কথা শোনার জন্য ১০০১ নম্বর কক্ষে নি‌য়ে যান। কক্ষে ঢোকার পর দরজা বন্ধ ক‌রে দেওয়া হয়। এরপর তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ওই কক্ষে তখন কমপক্ষে আটজন শিক্ষার্থী ছিলেন। একপর্যায়ে সবার চোখ ফাঁকি দি‌য়ে দরজা খুলে দৌড়ে পালি‌য়ে ৪০১৪ নম্বর কক্ষে আশ্রয় নেন শাহ জালাল। হামলাকারীরা সেখা‌নে গি‌য়ে তাঁকে ধরে নিয়ে যেতে যান। তবে ওই কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে হামলাকারীরা চলে যান।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দেওয়া তাহমিদ জামান ওরফে নাভিদ ও ফাতাউর রাফি দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ফাতাউরসহ তাঁর পক্ষের চারজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়।