শেষবেলার ভিড়ে বিক্রিও বেশি

রোহিঙ্গা: মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম, আমার দীপেশ আবিষ্কার: শাহাদুজ্জামান, সিক্স ইজি পিসেস ভাষান্তর: উচ্ছ্বাস তৌসিফ, মেঘেদের দিন: সাদাত হোসাইন
রোহিঙ্গা: মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম, আমার দীপেশ আবিষ্কার: শাহাদুজ্জামান, সিক্স ইজি পিসেস ভাষান্তর: উচ্ছ্বাস তৌসিফ, মেঘেদের দিন: সাদাত হোসাইন

এ বছর বইমেলায় এ রকম ভিড় আর চোখে পড়েনি এবং বলতেই হচ্ছে এই ভিড়ে শুধু ঘুরে বেড়ানোর স্বীকৃতি ছিল না, ছিল বই কেনার পর্ব। প্রতিটি অলিগলি ছিল লোকে লোকারণ্য এবং ভালো লাগছিল এ জন্য যে অনেক মেয়ের উপস্থিতিতেও কেউ কোথাও নির্যাতিত হয়নি। অর্থাৎ ভিড়ের মধ্যে কিছুটা হলেও সাবালক হয়ে উঠছে পুরুষ মনস্তত্ত্ব।

কোথাও কোথাও বসছিল শিল্পী-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা। কোথাও কেউ একাই গিয়ে বসলেন স্টলে কিংবা প্যাভিলিয়নে। প্রথমা প্রকাশনে ছিলেন আনিসুল হক। তিনিও অটোগ্রাফ দিতে দিতে সেলফি তুলছিলেন। সংবেদে দেখা গেল অদিতি ফাল্গুনী বসে আছেন এবং হেসে হেসে কথা বলছেন তাঁর পাঠকদের সঙ্গে। বাতিঘরের সামনে যথারীতি অনেক লেখকের আড্ডা। এর মধ্যে জি এইচ হাবীব হাসতে হাসতে তাঁর গোলাপের নাম বইটি ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন একজন ভক্ত পাঠকের থলেতে।

তাম্রলিপির সামনে অনেক দূর থেকে দেখা গেল মানুষের ভিড়। সেখানে সালমান মুক্তাদির ও আয়মান সাদিক এসেছিলেন। একটু সামনেই একটা চেয়ারে বসে ছিলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনিও অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন। তাঁর সামনে মূলত কিশোর-তরুণেরা এবং হ্যাঁ প্রত্যেকেই বই নেওয়ার সময় একটি করে সেলফি তুলে নিচ্ছিল।

গতকাল শুক্রবার ক্রেতাদের মধ্যে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। বোঝাই যাচ্ছিল তাঁদের দেহ ভাষায়, তাঁরা আজ বই কিনছেন এবং কিনবেন। মাহমুদা সুলতানা প্রিয়ার হাতে দুই থলে বই দেখে তাঁকে থামানো হলো। সঙ্গে ছিলেন তাঁরই সহকর্মী রাফসানুল হক। ‘কী বই কিনলেন?’ ‘এখানে যা দেখছেন তার সবই হ‌ুমায়ূন আহমেদের বই। আগেও পড়েছি, কিন্তু আমি ভাবছি আমার একটা ছোট্ট হ‌ুমায়ূন আহমেদ লাইব্রেরি থাকবে।’

‘এখন যাঁরা লিখছেন তাঁদের বই কিনবেন না?’

‘কিনব। আগে হুমায়ূন আহমেদ কেনা শেষ করে নিই।’

‘রাফসানুল, আপনি কী কিনলেন?’

‘আমি একটা মোটা হ‌ুমায়ূন সমগ্র কিনেছি।’

পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে যাচ্ছিলেন তানজিলুর রহমান। বললেন, ‘আমি কিছু সায়েন্স ফিকশন কিনেছি। আর কবিতা কিনেছি শাশ্বত হাসানের।’

‘আপনার বয়সীদের লেখাই কেনেন?’

‘না, রবিঠাকুরের বইও কিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার প্রিয় কবি।’

পারভীন ইয়াসমিন নাহার আড্ডা দিচ্ছিলেন তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে। কবিতার বই তাঁর আরাধ্য। যাবেন বৈভবের স্টলে। সেখানে নাকি অনেকগুলো ভালো কবিতার বই পেতে পারেন। এর মধ্যে তিনি শামীম রুনার একটি উপন্যাস কিনেছেন।

সাহিত্যদেশ, বর্ষাদুপুর, শব্দশিল্পজুড়ে মানুষের ভিড় এবং আনন্দের বিষয়, প্রায় সবার হাতেই বইয়ের থলে। তৌহিদুল আলম কিনেছেন নতুন লেখকদের বই। মোস্তফা মামুনের ম্যাচের আগের দিন আর হাসান মাহমুদের জবাই ঘর কিনেছেন তিনি।

গতকাল রোদ ছিল কম। শিশু চত্বরে ভিড় ছিল বেশি। শিশুদের জন্য লেখা অনেক বই শেষ হয়ে গেছে বলে জানালেন কোনো কোনো বিক্রেতা। মেলা শেষ হয়ে আসছে, সেটা বোঝা যাচ্ছিল বিক্রির প্রাবল্যে।

মেলা থেকে বের হওয়ার আগে একটা দৃশ্য চোখে লেগে থাকল। বেঞ্চিতে বসে ছিলেন এক তরুণ ও এক তরুণী। তরুণীর চোখ ভেজা। চলতি পথে হাওয়ায় ভেসে এল তরুণীর বলা কথাটি। ‘আবার একটা বছর অপেক্ষা! তোমার সঙ্গে পুরো এক মাস আবার কত দিন দেখা হবে না!’

কেন পুরো এক মাস দেখা হবে না, সেটা বোঝার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বইমেলা যে সর্ববিচারেই মানুষের বিশাল মিলনক্ষেত্র, সে কথা বুঝতে বাকি রইল না।

মেলায় প্রথমা প্রকাশন এনেছে উচ্ছ্বাস তৌসিফ অনূদিত রিচার্ড ফাইনম্যানের সিক্স ইজি পিসেস, মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলামের রোহিঙ্গা: নিঃসঙ্গ নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠী। অন্যপ্রকাশ এনেছে সাদাত হোসাইনের মেঘেদের দিন। মাওলা ব্রাদার্স এনেছে শাহাদুজ্জামানের আমার দীপেশ আবিষ্কার। গ্রন্থকুটির এনেছে আব্দুল্লাহ্ জামিলের আঁধারের গায়ে রক্তের দাগ। পাঠক সমাবেশ এনেছে পিয়াস মজিদের দুপুরের মতো দীর্ঘ কবিতা। বাংলাপ্রকাশ এনেছে জোহরা শিউলীর বিজ্ঞানীদের জীবনী। চন্দ্রাবতী একাডেমি এনেছে রোমেন রায়হানের আমাদের কোথাও কোনো শাখা নেই