১৭৫ বছর পূর্তি উৎসব, অন্য রকম মিলনমেলা
মাহবুবুর রহমান অবসরপ্রাপ্ত টেক্সটাইল প্রকৌশলী। আর খলিলুর রহমান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা। দুজনের বয়স ৮২ বছর ছুঁই ছুঁই। তাঁদের দেখা হয় না কত দিন! ১৯৫৪ সালে দুজন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়ে সেই যে বিদ্যালয় ছেড়েছেন, তারপর আর দেখা হয়নি।
মাঝখানে জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। দীর্ঘদিন পর শৈশব স্মৃতিজড়ানো সেই বিদ্যাপীঠে ১৭৫ বছর পূর্তি উৎসবে যোগ দিতে এসে প্রিয় সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দুজন। একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বগুড়ার যে ভাষা দিয়ে জীবনটা শুরু, সেই ভাষাতেই খলিলুর শৈশবের প্রিয় বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে বলেন, ‘বন্ধু, তুই ক্যাংকা আচু?, শরীরডা তোর ক্যাংকা আচে?’, তোর ছলপল কয়ডা? কে কী করিচ্চে?’। মাহবুবুর জবাব দিলেন, ‘বয়স বিরাশি চলিচ্চে। এই বয়সে শরীরডা আর কত ভাল থাকপি। শরীরডা খুব ভালো না।’
বগুড়া শহরের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত পৌর উচ্চবিদ্যালয়ের (বাঙলা স্কুল) ১৭৫ বছর পূর্তি উৎসব ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে এভাবে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ১৯৫৪ সালের ব্যাচের প্রাক্তন দুই শিক্ষার্থী। শুধু এই দুজনই নন, ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠের ১৭৫ বছর পূর্তি উৎসবে এসে গতকাল শুক্রবার দিনভর আবেগ, উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হয়ে পড়েন বিদ্যালয়ের নবীন-প্রবীণ সব শিক্ষার্থী। স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা মনে করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকে। দীর্ঘদিন পর বন্ধুরা একসঙ্গে হয়ে একে অন্যকে বুকে জুড়িয়ে ধরার পাশাপাশি জমজমাট আড্ডা, হাসি, ঠাট্টা-মশকরায় দিনভর কাটিয়ে দেন। সন্ধ্যায় নাচ-গান আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা।
সকালে প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রদের উপস্থিতিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন আর কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে ‘ফিরে এসো বন্ধু আবার পাঠশালাতে’ স্লোগানে গৌরবের ১৭৫ বছর পূর্তি উৎসব শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের ১৯৬৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী পৌর উচ্চবিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সমন্বয়কারী ও দৈনিক করতোয়ার সম্পাদক মোজাম্মেল হক। পরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বগুড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরিফ রেহমানের সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণা পর্বে একে একে স্মৃতিচারণা করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, পৌর উচ্চবিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আখতার আজম, সাধারণ সম্পাদক তপন চক্রবর্তী প্রমুখ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিব তাঁর বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ এই পথচলায় বিদ্যাপীঠটি অসংখ্য গুণীজনের জন্ম দিয়েছে। এখানকার প্রাক্তন ছাত্রদের অনেকে নিজ নিজ পেশায় সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, এলাকার কয়েকজন বিদ্যানুরাগীর প্রচেষ্টায় ১৮৪৪ সালে বাঙলা স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়। পরে এর নামকরণ করা হয় পৌর উচ্চবিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০০।