ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান

রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মিলনায়তনে আজ শনিবার ‘ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় কমিটি’র প্রথম জাতীয় সম্মেলন হয়। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মিলনায়তনে আজ শনিবার ‘ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় কমিটি’র প্রথম জাতীয় সম্মেলন হয়। ছবি: প্রথম আলো

স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক সমাজ। কিন্তু তা হয়নি। বরং দেশে ফ্যাসিবাদ চলছে। এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

আজ শনিবার ‘ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় কমিটি’র প্রথম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মিলনায়তনে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় কমিটির সভাপতি বদরুদ্দীন উমর বলেন, ফ্যাসিবাদের কোনো মেরুদণ্ড নেই, স্বাধীনতা নেই। ফ্যাসিবাদ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। এরা সাম্রাজ্যবাদের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, দেশে এখন যে ফ্যাসিবাদ চলছে, তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। ঘরে বসে সমালোচনা করলে শুধু হবে না।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বদরুদ্দীন উমর বলেন, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে ধসে গেছে। তাদের সাংগঠনিক কাজ নেই। তাদের কাজ চুরি, লুটপাট আর ডাকাতি করা।

১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মা সেলিনা আখতার সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ডা. মিলনের স্বপ্ন ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক, সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে। কিন্তু তা হয়নি। গণতন্ত্রের নামে নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে গণতন্ত্র বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে।

ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেন বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের সমাজ একটি ভিন্ন সমাজ হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেটা হয়নি। ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ভিন্নমতের রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সংগঠন রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কার্যত দেশে একদলীয় শাসন চলছে। গত ১৯ বছরে এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে কোনো যুক্তি কাজ করে না। তিনি ফ্যসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানান।

অন্যদের মধ্যে জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অধিকারের’ তথ্য অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৪৪ জন নাগরিককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অন্য এক হিসাবে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৩৩৬ জন ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, গুমের শিকার হয়েছেন ৫৫৫ জন। ২০১৯ সালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ১২৫টি হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার সারা দেশে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের দমন করার উদ্দেশে তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা করেছে এবং করে চলেছে। বিচার বিভাগ কার্যত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ফলে সরকারের হস্তক্ষেপে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীরা আদালতেও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।