লাশের পরিচয় গোপন করতে পুড়িয়ে দেন বন্ধুকে

নিহত উত্তম আকাশ ওরফে আলিফ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত উত্তম আকাশ ওরফে আলিফ। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুত্ব। একসঙ্গে চলাফেরা। কিন্তু দুই বন্ধুর মধ্যে টাকাপয়সা নিয়ে একপর্যায়ে দেখা দেয় বিরোধ। সেই বিরোধের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে বন্ধুকে ডেকে এনে শ্বাসরোধে হত্যা করেন অপর বন্ধু। এরপর হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে বাঁচতে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেন।

আজ শনিবার মানিকগঞ্জে আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই বর্ণনা দেন এই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামি ইমরান হোসেন (২১)। তিনি সিঙ্গাইরের চর গোলড়া গ্রামের জামাল মোল্লার ছেলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার চর গোলড়া গ্রামে একটি খেতের মধ্যে আগুনে পোড়া এক তরুণের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়া লাশের পরিচয় প্রাথমিক অবস্থায় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করে। এ নিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনে 

পরে পুলিশ নিহত তরুণের পরিচয় বের করে। হত্যাকাণ্ডের শিকার তরুণ হলেন সদর উপজেলার লেমুবাড়ি গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে উত্তম আকাশ ওরফে আলিফ (২০)। তিনি আলিফ নামেই বেশি পরিচিত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিঙ্গাইর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন জানান, গতকাল শুক্রবার সকালে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকার সূত্রাপুর থেকে এই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামি ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ তাঁকে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতের বিচারক শাকিল আহম্মেদের কাছে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত জানান।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ইমরান (মাঝে)। ছবি: প্রথম আলো
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ইমরান (মাঝে)। ছবি: প্রথম আলো

এসআই জানান, মা–বাবা ঢাকায় থাকায় আলিফ সিঙ্গাইরের রাজেন্দ্রপুর গ্রামে দাদির কাছে থাকতেন। ছোটবেলা থেকে আলিফ ও ইমরান একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। পরে তাঁরা ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েন। মাদকসেবনের টাকাপয়সা নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। কয়েক মাস আগে আলিফ ঢাকার মিরপুরে থাকা অবস্থায় ইমরানকে ফোন করে ডেকে মারধর করেন। এ নিয়ে আলিফের সঙ্গে ইমরানের দূরত্ব তৈরি হয়। এরপর এলাকায় এলে আলিফ অন্য বন্ধুদের সঙ্গে চলাফেরা ও ইয়াবা সেবন করতেন। এ নিয়ে আলিফের প্রতি ইমরানের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। এসব বিষয় নিয়ে আলিফকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ইমরান।

আদালতে জবানবন্দিতে আলিফ জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কল করে আলিফকে বাড়িতে ডেকে নেন তিনি। তাঁরা একসঙ্গে রাতের খাবারও খান। রাত ১২টার দিকে পাশের চর গোলড়া গ্রামে আলিফকে নিয়ে যান ইমরান। এরপর ইমরান প্যান্টের কাপড়ের বেল্ট দিয়ে আলিফকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। পরে কেরোসিন ঢেলে লাশ পুড়িয়ে দেন।

এসআই বলেন, আলিফের সঙ্গে ইমরানের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। এই হত্যাকাণ্ড থেকে তিনি বাঁচতে লাশ কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন।