রাবিতে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবার যৌন হয়রানির মামলা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ১৩ জন শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে নগরের চন্দ্রিমা থানায় মামলাটি করেন অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের একজন।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুম মনির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কারণে–অকারণে শিক্ষক ওই ছাত্রীকে নানা সময়ে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে অশ্লীল বার্তা পাঠিয়েছিলেন। বিভিন্ন সময় গায়ে হাত দিয়েছেন। অন্য নারী শিক্ষকদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন। এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

ওসি বলেন, এ মামলাটি গুরুত্বসহকারে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ওই বিভাগ–সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

এ ছাড়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে গত বুধবার দুপুরে যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ সেলে ১৩ জন শিক্ষার্থী পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

তবে অভিযোগ জমা দেওয়ার আগে এক শিক্ষার্থীকে ফোন করে অভিযোগ না করার অনুরোধ করেছিলেন শিক্ষক। মুঠোফোনে কথোপকথনের অডিও গত বুধবার রাতে একটি সূত্রে পাওয়া গেছে।

কথোপকথনের অডিওটি বুধবার সকালের। দুপুরে অভিযোগ করার পর ওই রাতে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের সূত্র এই প্রতিবেদককে অডিও সরবরাহ করে। কথোপকথনের ব্যাপারটি অভিযুক্ত শিক্ষকও নিশ্চিত করেছেন।

২ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের ওই অডিওতে শোনা যায়, ছাত্রীর উদ্দেশে ওই শিক্ষক বলেছেন, ‘প্লিজ, আমার অনেক শিক্ষা হয়ে গেছে। জীবনে আর কোনো দিন চারুকলা বা অন্য কোনো জায়গার মেয়েকে কোনো কিছু বলব না। তোমার পা ধরছি। তোমার ভাবির কাছে এটা জানাজানি হলে আমার সোনার সংসার শেষ হয়ে যাবে।’ অডিওটির এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীকে সরাসরি ভিসির কাছে অভিযোগ দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায়। তখন ওই শিক্ষক বলেন, ‘মা, আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে, সত্যি বলছি।’

প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়ার আগে ছাত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়ে ওই শিক্ষক বলেন, ‘এরা যে এ রকম করে করবে, সেটাও জানি না। যখন বলে, এটা নিয়ে ভিসির কাছে যাবে, তখন তাৎক্ষণিকভাবে আটকানো দরকার।’

অভিযুক্ত ওই শিক্ষক বলেন, ‘আমি তো বলছি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করিনি। ওরা আমার ফেসবুকে বিভিন্ন ছবি দেয়। আমার সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষকের পরিচয়, তো, বিভিন্ন সময় পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন ছবি দেয়। এর মধ্যে দু-একটি ছবি অন্য রকম থাকে। আর আমাদের চারুকলার বিষয়ই আরকি। তো, এসব নিয়ে ওরা একটু মন খারাপ করছে। আমি বলেছি, এ নিয়ে আর কথা বোলো না। এইটুকুই।’

যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ সেলে জমা দেওয়া অভিযোগে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, ‘অনেক দিন থেকে প্রায় সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ও ক্লাসের বাইরে অশ্লীল ভাষায় কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, মেসেজ ও মেসেঞ্জারে অশ্লীল ছবি, ভিডিও, মেসেজ প্রেরণ করে অসামাজিক কার্যকলাপের আহ্বান জানানো হয়। এসব অশ্লীল বক্তব্যের শিকার হয়ে আমরা মানসিকভাবে হেনস্তার শিকার ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।’