বনানী ফুডকোর্ট ১৩ মাসেও চালু হয়নি, ভেতরে অসামাজিক কাজ

দৃষ্টিনন্দন ফুডকোর্টটি এভাবেই ফেলে রাখা হয়েছে। গতকাল দুপুরের দৃশ্য।  প্রথম আলো
দৃষ্টিনন্দন ফুডকোর্টটি এভাবেই ফেলে রাখা হয়েছে। গতকাল দুপুরের দৃশ্য। প্রথম আলো

নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার ১৩ মাস পরও চালু হয়নি বনানী ফুডকোর্ট। এটা আদৌ চালু হবে কি না, এ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ফুডকোর্টটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অভিযোগ উঠেছে, গভীর রাতে সেখানে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ।

প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করে ফুডকোর্টটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। এর অবস্থান বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর দক্ষিণ পাশে ডিএনসিসির কমিউনিটি সেন্টার লাগোয়া পশ্চিম দিকে। আয়তন প্রায় এক বিঘা।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, ফুডকোর্টটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেই জায়গাটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা ভাগাড় হিসেবে জায়গাটি ব্যবহার করতেন। বনানী এলাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ওই এলাকার মানুষের অবসর সময় কাটানোর কথা বিবেচনা করে আনিসুল হক সেখানে ফুডকোর্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০১৬ সালের শেষ দিকে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়, ২০১৮ সালের নভেম্বরে শেষ হয়।

ফুডকোর্ট নির্মাণের প্রকৌশলী ছিলেন ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক খন্দকার মাহাবুব আলম। জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটা চালু করা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা তিনি জানেন না। সংস্থার সম্পত্তি বিভাগ ভালো বলতে পারবে। পরে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

গতকাল শনিবার দেখা গেছে, ফুডকোর্টের চারপাশে টিনের সীমানাপ্রাচীর সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নির্মাণ শেষে দীর্ঘদিন এর চারপাশে টিনের সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর এখন এর আশপাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট গড়ে উঠেছে। পূর্ব দিকে বনানী বাজারের যেসব দোকানপাট রয়েছে, তারা ফুডকোর্টের একটি অংশ ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করছে। ফুডকোর্টের ভেতর তালাবদ্ধ কয়েকটি দোকানের তালা ভেঙে নতুন তালা লাগানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে এর একটি অবশ্য খোলা পাওয়া গেছে। সেখানে দুজন নারীকে সাজগোজ করতে দেখা গেছে। সেখানকার কয়েকজন দোকানি বললেন, ফুডকোর্টের ভেতর থাকা দোকানে রাতে অসামাজিক কাজ হয়। গভীর রাতে ফুডকোর্টটি মাদকসেবীরা দখল করে নেন।

>

প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্বপ্নের ফুডকোর্ট ভেঙে পার্কিং করার চিন্তা হয়েছিল। এখন নগর-পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে বসার কথা বলা হচ্ছে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রথম আলোয় ‘ফুডকোর্ট ভেঙে গাড়ি পার্কিং’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তখন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বনানী এলাকায় আসা লোকদের গাড়ি পার্ক করার জায়গা নেই। ফুডকোর্ট ভেঙে বহুতল পার্কিং করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে গতকাল আতিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফুডকোর্টটি রাখা না–রাখার বিষয়টি নিয়ে তিনি নগর–পরিকল্পনাবিদদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসিসির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বনানী ফুডকোর্টের সঙ্গে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের আবেগ জড়িত। এটা আনিসুল হকের স্বপ্ন ছিল। করপোরেশনের বেশির ভাগ কর্মকর্তাই এটা ভাঙার বিপক্ষে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ফুডকোর্ট ভেঙে পার্কিং করা হলে সর্বোচ্চ ৯০টি গাড়ি পার্ক করা যাবে। এতে ওই এলাকায় যানজটের সমস্যার সমাধান হবে না। তাই এটি দ্রুত চালু করে গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়টি নিয়ে বিকল্প চিন্তা ভাবনা করা উচিত।

বনানী ফুডকোর্ট নিয়ে কী ধরনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, জানতে চাইলে প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা নিয়ে ঝামেলা আছে। এটি তিনি পরে বলবেন।’

 এই স্থাপনাটির দৃষ্টিনন্দন নকশা করেছিলেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। গতকাল বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছিলাম তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। করপোরেশন থেকেও কেউ যোগাযোগ করেনি।’ তিনি বলেন, এত টাকা খরচ করে নির্মাণের পর এত দিন কেন ফেলে রাখা হয়েছে, তা তিনি জানেন না। তবে দ্রুত এটা চালু করার পক্ষে মত দেন তিনি।