বাংলার বাতাসে আবারও ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের গন্ধ: কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।। প্রথম আলো ফাইল ছবি
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।। প্রথম আলো ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ আছে। সে চ্যালেঞ্জ আমাদের অতিক্রম করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলার বাতাসে আবারও ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের গন্ধ। সাম্প্রদায়িক অশুভশক্তি শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এই অশুভশক্তি আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ; এখন তারা চক্রান্তের পথে সরকার হটানোর ষড়যন্ত্র করছে।’

রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগে ভালো লোকের অভাব নেই। দল ভারী করার জন্য খারাপ লোক দলে টানবেন না। কমিটি করতে গিয়ে পকেট কমিটি করবেন না। পকেট কমিটি করে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করবেন না, শেখ হাসিনাকে ছোট করবেন না, আওয়ামী লীগকে ছোট ও দুর্বল করবেন না। পকেটের লোকদের দিয়ে কমিটি করলে আওয়ামী লীগ সুবিধাবাদীদের হাতে চলে যাবে।’

মাঠভর্তি কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বাস করেন; তাহলে আমি বলে যেতে চাই দুর্নীতিকে না বলুন, সন্ত্রাসকে না বলুন, চাঁদাবাজিকে না বলুন, মাদককে না বলুন। যদি আদর্শের অনুসারী হন, তাহলে সেবার আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাবেন। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আমরা আওয়ামী লীগে কোনো সুবিধাবাদী, দুর্নীতবাজ সন্ত্রাসীকে জায়গা দেব না।’

দলের ভেতরে বিভেদ সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘কেউ নিজস্ব বলয়, নিজস্ব সিন্ডিকেট সৃষ্টি করতে পারবেন না। ঘরের মধ্যে ঘর করা যাবে না। মশারির মধ্যে মশারি খাটানো যাবে না। দুঃসময়ের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। সুবিধাবাদীদের আওয়ামী লীগে জায়গা নেই। সুবিধাবাদীদের দরকার নেই। তারা সুসময়ে আছে, দুঃসময় এলে পালিয়ে যাবে। যার যার পছন্দের লোককে নেতা বানাবেন; আর সেই নেতারা বিপদের দিনে সাইবেরিয়ার পাখির মতো পালিয়ে যাবে। এই ধরনের নেতা আমাদের দরকার নেই। ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের দিয়ে আওয়ামী লীগকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।’

সম্মেলনে মঞ্চ ভর্তি নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে কেন যেন মাঝে মাঝে মানে হয়, আওয়ামী লীগে কর্মী কমে যাচ্ছে। নেতা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের এত নেতার দরকার নেই। আমাদের আজকে সাচ্চা কর্মী দরকার। মঞ্চের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে কত নেতা!’ তিনি এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মাঠভর্তি কর্মীরা করতালি আর চিৎকার দিয়ে তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন জানান।

বিএনপির আমলের দুর্নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতিতে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিএনপিকে বাংলাদেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। যে পার্টিকে কানাডার আদালত পর্যন্ত সন্ত্রাসী বলেছে, সেই পার্টিকে বাংলার মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ আরেক বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্র হাওয়া ভবন দেখতে চায় না। এরা যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ‘আবার যদি ইচ্ছে করে আবার আসিব ফিরে, দুঃখ সুখের ঢেউখেলানো পদ্মা নদীর তীরে।’—কবিতার এই পঙ্‌ক্তি বলে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধান অতিথি জাতীয় সংগীতের সঙ্গে বেলুন, ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে নগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবদুল খালেক, সাইদুর রহমান খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ও বেগম আখতার জাহান।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।