ঢাকা-১০-এ নৌকা পেলেন শফিউল, রবিউলের ধানের শীষ

নির্বাচন কমিশন ভবন
নির্বাচন কমিশন ভবন

ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম। আর বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক সংগ্রহ করেছেন প্রার্থী শেখ রবিউল আলম।

আজ রোববার সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ভবনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিজ নিজ দলের নির্বাচনী প্রতীক সংগ্রহ করেন এই আসনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা।

ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক পেয়েছেন হাজী মো. শাহজাহান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের হারিকেন প্রতীক পেয়েছেন নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন ডাব প্রতীক। প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) কাজী মুহাম্মদ আবদুর রহিম বাঘ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল ইসলাম। তিনি এই নির্বাচনের চ্যালেঞ্জগুলোকে সম্ভাবনায় পরিণত করতে চান।

শফিউল ইসলাম বলেন, এই আসনে ১১ বছর ধরে সাংসদ থাকা শেখ ফজলে নূর তাপস এলাকাবাসীর জন্য কাজ করেছেন। তিনি যেখানে কাজ শেষ করেছেন, সেখান থেকেই শুরু করতে চান বলে জানান।

ফেব্রুয়ারির সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারের কম উপস্থিতি এই উপনির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না—এমন এক প্রশ্নের জবাবে শফিউল ইসলাম বলেন, সিটি নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য অনেক কিছুর মধ্যেও ভালো কিছু আছে। এখানে কোনো মারামারি-হানাহানির ঘটনা ঘটেনি। উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হলেও স্বচ্ছ ভোটের দিকে বেশি গুরুত্ব দেন তিনি। যাঁরা ঢাকা–১০ আসনের ভোটার তাঁদের ভোট দিতে আসার আহ্বান জানান তিনি।

শফিউল ইসলাম বলেন, এই আসনে সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রচারে অংশ নিতে কিছু বিষয়ে একমত হয়েছেন। এই নির্বাচনে জনসাধারণের কোনো দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে দলীয় নেতা–কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে শফিউল ইসলাম বলেন, ‘আনিসুল হকও ব্যবসায়ী নেতা ছিলেন। মানুষের মধ্যে বহুমুখী প্রতিভা থাকতে পারে। আমার জীবনে ছাত্রলীগ করেছি, যুবলীগ করেছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। সারা জীবন রাজনীতি করেছি। রাজনীতি গণতান্ত্রিক অধিকার ও রাজনৈতিক কর্মী হিসেবেই এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’

বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম বলেন, ‘ইতিমধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ এবং তা মানুষের কাছে উন্মুক্ত হয়েছে। নির্বাচনের নামে প্রহসন করছে সরকার এবং তারা জনগণকে ভোটবিমুখ করে ফেলেছে। একসময় তারা হয়তো বলবে, দেশ খুব উন্নত হলে নির্বাচন লাগে না। সরকারের নির্বাচনব্যবস্থা নষ্ট করে ফেলছে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’

শেখ রবিউল আলম আরও বলেন, ‘ঢাকা–১০ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ও জনপ্রিয়তা নিশ্চিত বিজয় অর্জন করার মতো। আমরা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্যই এ নির্বাচনে আছি। দলও সে প্রস্তুতি নিয়েই অংশ নিয়েছে। আশা করব, সরকারও এ নির্বাচন বানচাল করবে না।’

শেখ রবিউল আলম অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি নিয়ে কথা বললেও নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা বলেনি। নির্বাচনে পুলিশ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কী ভূমিকা হবে, সে বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

প্রতীক বরাদ্দ অনুষ্ঠানে রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন বলেন, এই উপনির্বাচনে নির্ধারিত ২১ জায়গায় পোস্টার টাঙাতে পারবেন প্রার্থীরা। সব রাজনৈতিক দল সুবিধমতো জায়গায় পাঁচটি করে পথসভা করতে পারবে। এ ছাড়া নির্ধারিত জায়গায় ডিজিটাল ব্যানার টাঙানো যাবে। আর নির্বাচনের পোস্টার ও ব্যানার স্থাপনের জন্য নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত পাঁচটি বিলবোর্ডে প্রার্থীর প্রতীক, ছবি ও নাম আলাদা করে দেওয়া থাকবে। নির্বাচনী প্রচারে যেখানে একদল পথসভা করবে, সেখানে আরেক দল করতে পারবে না। জনসভা করা যাবে না। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে নির্বাচনী ক্যাম্পে মাইক ব্যবহার করা যাবে। এর বাইরে একেবারেই মাইক বাজাতে পারবেন না। এর বাইরে কোথাও বা রাস্তা, অলিগলিতে পোস্টার টাঙাতে পারবেন না। আর ল্যামিনেটেড ও প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টার টাঙাতে পারবেন না।

সদ্য সমাপ্ত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মাইকিং, পোস্টার, সড়ক বা ফুটপাতের ওপর ক্যাম্প স্থাপনের কারণে জনদুর্ভোগ হয়। এ ছাড়া পলিথিন মোড়ানো পোস্টার ব্যবহারের ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ উপনির্বাচনে যাতে আকাশ ঢেকে না যায় ও দূষণ না ঘটে, সে জন্য নির্বাচন কমিশন এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলের প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কোনো ব্যবস্থায় যেতে চান না জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন। তিনি আচরণবিধি মেনে প্রচারে অংশ নিতে এবং জনদুর্ভোগ না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

২১ মার্চ এই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা-১০ আসনে আগামী ২১ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। এই আসনের সাংসদ ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি গত ১ ফেব্রুয়ারি সিটি নির্বাচনে ডিএসসিসির মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি এই আসন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।