নারী নির্যাতন মামলার আসামি হাতকড়া নিয়ে পালানোর পরে ধরা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। আসামি গ্রেপ্তার করে গাড়িতে তোলার সময় স্বজনেরা পুলিশের ওপর চড়াও হন। ইট ছুড়ে ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। সেই সুযোগে হাতকড়া পরা অবস্থায় আসামি পুলিশের কাছ থেকে ছুটে পালিয়ে যান। পরে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় পুলিশ আবারও আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

গ্রেপ্তার আসামির নাম আনারুল ইসলাম (৩৭)।

সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশ বহনকারী মাইক্রোবাস ভাঙচুরের অভিযোগে আলমডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হেলেনা পারভীন বাদী হয়ে ৩৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এই মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে গ্রামের অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর গ্রামের বোরহান উদ্দিনের ছেলে আনারুল ইসলাম আগের চারটি বিয়ে ও সন্তানের খবর গোপন করে কুষ্টিয়ার হালসা গ্রামের মৃত বরকত আলীর মেয়ে শিউলি খাতুনকে (২৬) গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে শিউলির ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে। শিউলির মা দেড় লাখ টাকা ও সোনার গয়না দেন। সবশেষ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক চেয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শিউলিকে নির্যাতন করে গুরুতর জখম করা হয়। খবর পেয়ে শিউলির ভাই তাঁকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। নির্যাতনের ঘটনায় আনারুল এবং তাঁর বাবা ও মাকে আসামি করে শিউলি খাতুন গত শুক্রবার আলমডাঙ্গা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

এসআই হেলেনা পারভীনের নেতৃত্বে পুলিশের সাত সদস্যের একটি দল গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে লক্ষ্মীপুর গ্রামে অভিযান চালায়। গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে আনারুলকে গ্রেপ্তার করে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নেওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত আনারুলের স্বজনেরা বাধা দেন। এতে সেখানে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। এরপর স্বজনেরা পুলিশের মাইক্রোবাসে ইট ছুড়ে ভাঙচুর করেন। এই সুযোগে হাতকড়া পরা অবস্থায় পালিয়ে যান আনারুল।

খবর পেয়ে থানা থেকে অতিরিক্ত ফোর্স গিয়ে এলাকায় তল্লাশি চালায় এবং রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাতকড়াসহ আসামি আনারুলকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে নবাব আলী (৪৫), হাউস আলী (৩৫) ও সাইদুর রহমান(৩২) নামের তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় এসআই হেলেনা পারভীন বাদী হয়ে ৩৫ জনকে আসামি করে আজ রোববার থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আনারুল এবং আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এসআই হেলেনা জানান, আনারুলের বিরুদ্ধে এর আগেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক আরেকটি মামলা রয়েছে।

আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, পুলিশের ওপর হামলাসহ সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে এলাকায় অভিযান চলছে। তবে বাকি আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।