জেলা পুলিশের যত অস্ত্র ছিল, তার চেয়ে আমার বেশি ছিল: শামীম ওসমান

শামীম ওসমান। ফাইল ছবি
শামীম ওসমান। ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, ২০০১ সালের আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে যত অস্ত্র ছিল, তার চেয়ে বেশি অস্ত্র শামীম ওসমানের কাছে ছিল। আজ রোববার দুপুরে শহরের মাসদাইর পুলিশ লাইনসে জেলা পুলিশের আয়োজনে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২০’ আলোচনা সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাংসদ লিয়াকত হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, জেলা পুলিশ কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি শাহ নেওয়াজ, র‌্যাব-১১–এর সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক, বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

শামীম ওসমান বলেন, ‘২০০১ সালের আগে পুরো জেলা পুলিশের ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র ছিল, আমার কাছে এর চেয়ে বেশি অস্ত্র ছিল। মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই। কিন্তু আজকে আমার গাড়িতেও অস্ত্র আছে কি না, আমি জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি গতকাল এসপি সাহেবকে লিস্ট দেখিয়েছিলাম। ’৭৫–এর পর থেকে আমাদের কতজন মারা গেল? দেখলাম ৫০ জনের ওপরে মারা গেল। কিন্তু একটা হত্যার বিচারও পাই নাই। ২০০১ সালে বোম ব্লাস্ট হলো, মারা গেলাম, কিন্তু বিচার পাই নাই। কিন্তু আমরা বাঁচব কয় বছর?’

সাংসদ বলেন, ‘আপনারা (জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার) প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এই কনসেপ্টটা বদলে হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সেবক। আর আমরাও (নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি) প্রজাতন্ত্রের সেবক এখন। পার্থক্যটা হলো, আপনার মেন্টালিটিটা কী? আপনি কীভাবে এই সেবক হবেন, না শাসক হবেন। এখানে কেউ ক্ষমতায় এসে শাসক হতে চায়। আবার কেউ ক্ষমতায় থেকে সেবক হতে চায়। এখন যে সেবক হতে চায়, তার মর্যাদা এক রকম।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘ইদানীং আমি একটু ওয়াজে যাই। অনেকেই এ নিয়ে টিটকারি মারেন। কিন্তু আমি দুই বেলা কোরআন শরিফ পড়ি। আমি বাইশ বছর ধরে তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়ি নাই।’

সাংসদ বলেন, ‘কালকে বাঁচব কি না আমি জানি না। আপনারা পুলিশ। আপনারা সম্মানিত পেশায় চাকরি করেন। পৃথিবীর অন্য দেশে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশার ভেতরে এটি অন্যতম। এটি সম্মানিত পেশা। এই জায়গাটাতে বাংলাদেশের পুলিশ মোটামুটি এসে গেছে। আর কিছুদিন পরই হয়তো আসবে। ২০১৩-১৪ সালে আপনাদের (পুলিশ) ওপর যে কী নৃশংস হামলা হয়েছে, এটা তো আমাদের চোখেই দেখা। সারা বাংলাদেশে নাশকতায় কিছু করতে পারে নাই। সারা দেশে যখন আগুনসন্ত্রাস চলছে, তখন এই নারায়ণগঞ্জে একটা কিছুও করতে পারে নাই। এই ক্রেডিট নারায়ণগঞ্জের মানুষের এবং পুলিশের যৌথভাবে।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘সে সময় সদর থানার ওসি ছিল মঞ্জুর কাদের। তার ওপর একটি বাড়ি থেকে এসে হামলা চালানো হলো। ওই বাড়ি থেকে জামায়াত–শিবিরের ক্যাডাররা এসে তার ওপর হামলা করল। তখন চাষাঢ়ার সব হকারকে আমরা পলিটিক্যাল মোটিভেশন করেছিলাম। এর জন্য হকারদের প্রতি আলাদা একটা টান আছে। তারা লাঠি নিয়ে পাহারা দিত। যে মুহূর্তে পুলিশের ওপর অ্যাটাক হয়েছিল, এই টোটাল হকাররা লাঠি নিয়ে তাদের ঘেরাও করে ফেলেছিল। এ কারণেই ওরা কিন্তু নারায়ণগঞ্জে কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে নাই।’

সাংসদ বলেন, ‘আমি শামীম ভালো মানুষ না খারাপ মানুষ, সেই সার্টিফিকেট দেওয়ার মালিক আল্লাহ তায়ালা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন প্রশাসনের ভেতরে যে দলবাজিটা হয়, আমি এটা সমর্থন করি না। আমি মনে করি প্রশাসনের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরকার ক্যাপাবল বা ক্যাপাসিটি। আওয়ামী লীগ করতেন বা এটা করতেন। কিন্তু আপনি ক্যাপাবল নন। আপনি অসৎ পারসন। এটা আপনার কোনো কোয়ালিটি হতে পারে না। আপনার কোয়ালিটি এটিই হতে পারে, ইউ আর এ ক্যাপাবল পারসন।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি পলিটিশিয়ান, কিন্তু চোর। এই পলিটিশিয়ান থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। এরা দেশকে খুঁড়ে খুঁড়ে খেয়ে ফেলে। দেশের সম্পদ খেয়ে ফেলে।’