ঢাকায় হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। ছবি: ভারতীয় হাইকমিশনের সৌজন্যে
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। ছবি: ভারতীয় হাইকমিশনের সৌজন্যে

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা দুই দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। আজ সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।

দিনের প্রথম কর্মসূচিতে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে একটি সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

সহযোগিতা বাড়ানো এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ঢাকায় এসেছেন। তিনি সফরের প্রথম দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন।

ভারতের নতুন পররাষ্ট্রসচিব এমন এক সময়ে ঢাকায় আসছেন, যখন ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে (সিএএ) ঘিরে দিল্লির রাজপথে রক্ত ঝরছে। ভারতের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর চোখ রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রিংলার ঢাকা সফরের আলোচনায় নাগরিকত্ব আইনকে ঘিরে দিল্লির দাঙ্গা পরিস্থিতির প্রসঙ্গও আসবে। দিল্লির সহিংসতার প্রতিবাদে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোর দাবিতে রাজধানী ঢাকাতেও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ধর্মভিত্তিক এবং বামপন্থীসহ বিভিন্ন সংগঠন।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর (মুজিব বর্ষ) মূল অনুষ্ঠানটি হবে রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে ভারতের নরেন্দ্র মোদির। একই সঙ্গে ১৮ মার্চ ঢাকায় দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, মূলত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর চূড়ান্ত করতেই ঢাকায় আসছেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে দুই দেশের সহযোগিতা আরও জোরালো করতে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া যায়, সে বিষয়েও তিনি আলোচনা করতে পারেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় তিস্তার মতো অমীমাংসিত বিষয়গুলো বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব।

দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮ মার্চ ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। ওই বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ঢাকা সফরের সময় ওই সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, সংযুক্তি, দুই দেশে জনগণের অবাধ চলাচল এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মতো বিষয়গুলোও আলোচ্যসূচিতে থাকতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তি করা যায় কি না, তা নিয়ে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা চলছে।

প্রতিরক্ষা খাতে কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশ ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছিল। কিন্তু ওই এমওইউর আওতায় এখনো কেনাকাটার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। ভারত চাইছে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় ঋণচুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ দ্রুত প্রয়োজন অনুযায়ী কেনাকাটা শেষ করুক। গত বছরের জুনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ঢাকা সফর এবং অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় ভারত এ বিষয়টিতে জোর দিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।

গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসকে ঘিরে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর জেরে ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের ভারত সফর স্থগিত হয়ে যায়। গত ডিসেম্বরে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের একটি বৈঠকও পিছিয়ে যায়। এমন এক প্রেক্ষাপটে ফেব্রুয়ারিতে ভারতের নাগরিকত্ব আইনকে ঘিরে দিল্লির রাজপথের দাঙ্গা বাংলাদেশ সরকারকে নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তাই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার প্রথম ঢাকা সফরে নাগরিকত্ব আইনকে ঘিরে ভারতের সর্বশেষ মনোভাব ও অবস্থান জানতে চাইবে বাংলাদেশ।