এ বছরই অভিন্ন নদীর চুক্তি হতে পারে: হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, অভিন্ন নদীগুলোর তথ্য হালনাগাদ করে তা সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। সম্ভবত এ বছরের মধ্যে অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনের চুক্তি সই হবে।

আজ সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এদিন সকালে প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসেন।

দুই দিনের সফরের প্রথম দিনে ‘বাংলাদেশ ও ভারত: একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) ও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন যৌথভাবে ওই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীও দ্রুততম সময়ে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের তাগিদ দেন।

বিসের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এম ফজলুল করিমের সঞ্চালনায় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস ও বিসের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক কর্নেল শেখ মাসুদ আহমেদ বক্তব্য দেন।

তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে দুই দেশেরই আগ্রহ রয়েছে। অভিন্ন নদীগুলোর পানির তথ্য হালনাগাদ করে সমন্বয়ের প্রক্রিয়া চলছে। এ বছরের মধ্যেই অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা আছে।

শ্রিংলা বলেন, ভারতের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা প্রতিবেশী দেশে প্রভাব ফেলবে না। ভারতের আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই এনআরসি হচ্ছে।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের সহযোগিতার ওপর জোর দেন। হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘এটা প্রমাণিত যে ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং ন্যায্য বণ্টন করার মধ্যেই আমাদের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ নিহিত। আমাদের দুই পক্ষই স্বীকার করে যে অভিন্ন নদী বিষয়ে আমাদের আরও উন্নতির সুযোগ আছে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গত আগস্ট থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপ শুরু হয়েছে।’

দিল্লিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের দায়িত্ব পালন শেষে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে কাজ করে গেছেন দেশটির এখনকার পররাষ্ট্রসচিব। ঢাকায় থাকার স্মৃতিচারণা করে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘ঢাকায় আসতে পারা আমার জন্য খুবই আনন্দের। কারণ, ঢাকা আমার কাছে নিজের শহরের মতোই। ঢাকা ও বাংলাদেশের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। আমি হাইকমিশনার হিসেবে এখানে কাজ করেছি এবং আমার কর্মজীবনের অন্যতম সন্তুষ্টিদায়ক নিয়োগ ছিল এটি।’

মূল বক্তৃতায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এ মাসে মুজিব শতবর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা এই সফরের প্রত্যাশায় রয়েছি। কারণ, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই সম্পর্কের প্রতি অগ্রাধিকার দেন এবং এর চেয়েও বড় কারণ, বঙ্গবন্ধু একজন বিশ্বনন্দিত নেতা এবং বাংলাদেশ ও আমাদের উপমহাদেশের মুক্তির প্রতীক। ভারতে তাঁর নাম বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তিনি বাংলাদেশে যেমন সম্মান লাভ করেন, তেমনই ভারতেও সমান শ্রদ্ধার পাত্র। সুতরাং আমি এই জ্ঞানী, নির্ভীক, দৃঢ়প্রত্যয়ী এবং সর্বোপরি এমন একজন বীর, যিনি শোষণের হাত থেকে একটি জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন, সেই মহান বঙ্গসন্তানের জন্মশতবর্ষে আপনাদের শুভকামনা জানাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরও জাতীয় বীর। তাই বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে যৌথ প্রযোজনায় বিশেষ চলচ্চিত্র নির্মাণসহ জন্মশতবর্ষের বিভিন্ন আয়োজনের অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত।’

এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়েও হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা কথা বলেন। তিনি বলেন, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে এবং অনেক অভিন্ন সাংস্কৃতিক ধারা থাকায় এটাও অস্বীকার করা যায় না যে আমাদের দুই দেশেরই কিছু ঘটনা কারণে বা অকারণে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো আসামে নাগরিক পঞ্জি হালনাগাদকরণ, যে প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘এখানে আমি স্পষ্ট করেই বলতে চাই, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারবার বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আশ্বস্ত করেছেন যে এ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সুতরাং বাংলাদেশের জনগণের ওপর এর কোনো প্রভাব থাকবে না। আমরা এই ব্যাপারে আপনাদের আশ্বস্ত করছি।’

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারতের ভূমিকা নিয়ে যে সমালোচনা রয়েছে, তা নিয়ে দিল্লির অবস্থান ব্যাখ্যা করেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক সংকট এবং বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব বিষয়ে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অনেকের আগ্রহ এবং ভিত্তিহীন ধারণাও আছে। ভারত বাংলাদেশের মানবিক বোধের গভীর প্রশংসা করে, যার কারণে তারা প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। আপনারা যে বোঝা বহন করছেন, আমরা তা স্বীকার করি এবং সমবেদনা জানাই। আমরাই বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়েরই একমাত্র সত্যিকার বন্ধুদেশ। যেখানে অন্য দেশগুলো চায় আপনারা এই সমস্যা অনির্দিষ্টকালের জন্য বয়ে চলুন, সেখানে আমরা পারস্পরিক গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে একটা সমাধান চাই এবং এই বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর রাখাইনে দ্রুততম প্রত্যাবাসন ও সম্মানজনক জীবন ফিরে পেতে সহায়তা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এই প্রত্যাবাসন হতে হবে নিরাপদ ও টেকসই।’

শ্রিংলা জানান, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের শিবির গুটিয়ে নেওয়া, আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা করা এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়গুলো নিয়ে ভারত দেশটির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘এই বিশাল মানবিক সংকট মোকাবিলায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এই বিষয়ে আমাদের পরামর্শ হলো, আমরা সবাইকে উদ্বুদ্ধ করব বাগাড়ম্বর না করে যেন এই সমস্যার একটি মানবিক ও বাস্তবসম্মত সমাধানের প্রতি গুরুত্ব দেয়।’

সংশোধনী
অসাবধানতাবশত প্রথম প্রতিবেদনে অভিন্ন নদীগুলোর স্থলে তিস্তা নদীর চুক্তির কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।