পঞ্চগড়ে জমি নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পঞ্চগড়ে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে সংঘর্ষে রবিয়াল হোসেন (৩৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় উভয় পক্ষে আহত হয়েছেন আটজন।

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলার সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের শিংরোড়-দেওয়ানীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রবিয়াল হোসেন ওই এলাকার তমিজ উদ্দিনের ছেলে। 

আহত লোকজনকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজনকে আটক করেছে পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশ।

পুলিশ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উভয় পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদর উপজেলার শিংরোড-দেওয়ানীপাড়া এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক ও প্রতিবেশী মো. মোস্তফার মধ্যে বাড়ির পাশের ৬২ শতক জমির নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। ওই জমির ২৮ শতক নিজের দাবি করে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদে ও পরে আদালতে মামলাও করেন মোস্তফা।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় মোস্তফা বিরোধপূর্ণ জমিতে লোকজন নিয়ে বাঁশের বেড়া দিতে গেলে আবু বক্কর ও তাঁর পরিবারের লোকজন বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের আঘাতে আবু বক্কর সিদ্দিকের ভাতিজা রবিয়ালের মাথা জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

এ সময় আবু বক্কর সিদ্দিক (৫৫), তাঁর স্ত্রী লিলিমা আক্তার (৫০), মেয়ে উম্মে কুলসুম (৩০), ভাতিজা রবিউল ইসলাম (৪০) ও জহিরুল ইসলাম (৩২) আহত হন।

এ ছাড়া অপরপক্ষের মো. মোস্তফা (৬৫), তাঁর স্ত্রী খুকী বেগম (৫৫) ছেলে ফরিদুল ইসলাম (১৮) আহত হন। এই তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটক করেছে পুলিশ। পুলিশি হেফাজতে তাঁদের চিকিৎসা চলছে।

নিহত রবিয়াল হোসেনের চাচা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, মোস্তফা সম্পর্কে আমার ভাতিজা (বড় চাচার নাতি)। আমাদের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়ির পাশের ৬২ শতক জমির মধ্যে ২৫ শতক আমাদের দখলে ছিল। আর বাকি অংশ জবরদখল করে মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করছিল। এর আগে আমরা ওই জমি দাবি করলে মোস্তফা নিজেই ইউনিয়ন পরিষদের অভিযোগ করে। সেখানে সালিসি বৈঠকে আমাদের পক্ষেই রায় আসে। পরে তিন মাস আগে মোস্তফা ওই জমির ওপর আদালতে ১৪৪/১৪৫ ধারায় মামলা করে। আজ মোস্তফা তার লোকজন নিয়ে আমদের বাড়ির পাশে বিরোধীয় জমিতে বাঁশের বেড়া দিতে আসে। আমরা সেখানে বাধা দিতে গেলে তার লোকজন আমাদের ওপর ছুরি-কুড়ালসহ বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় আমার ভাতিজা মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যায়। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

অপর দিকে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন অপর পক্ষের মোস্তফার ছেলে ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সেখানে বেড়া দিতে যাইনি। আবু বক্কর সিদ্দিকের লোকজন আমাদের বাড়ির পাশের বিরোধীয় জমিতে বেড়া দিতে এলে আমরা সেখানে বাধা দিতে যাই। এ সময় তারাই আমাদের মারধর করে। একপর্যায়ে আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে সনাতন আমকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে এলে আমি নিচে পড়ে যাই। এ সময় আমার ওপরে থাকা রবিয়ালের মাথায় ওই আঘাতটি লেগে তার মৃত্যু হয়।’ তাদের নিজেদের পক্ষের আঘাতেই রবিয়ালের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমরা রবিয়াল হোসেন নামের ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। ধারালো ভারী কোনো বস্তু দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত লেগে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। লাশটির ময়নাতদন্ত করলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ পাওয়া যাবে।’

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যে নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। লাশ ময়নাতদন্তে পাঠানো হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও আটকের অভিযান চলছে।