কাউন্সিলর পদে কয়েকজনের মনোনয়ন নিয়ে ক্ষুব্ধ নাছির

চট্টগ্রাম নগরের আসকার দিঘি এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম যুবলীগ। এতে বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম নগরের আসকার দিঘি এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম যুবলীগ। এতে বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিতর্কিত কয়েকজন কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, বিতর্কিত ব্যক্তিরা কার সুপারিশে মনোনয়ন পেলেন, এটা জানতে হবে।

আজ সোমবার দুপুরে যুবলীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় চট্টগ্রামের মেয়র নাছির উদ্দীন এই অভিযোগ তোলেন। চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

উদ্বোধনী অধিবেশনের পর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় প্রতিনিধি সভার মূল কার্যক্রম শুরু হয়। এই অধিবেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, শেখ ফজলে নাঈম প্রমুখ। সভায় চট্টগ্রাম সিটির আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।

আজ সভা শুরুর আগে যুবলীগের দুই পক্ষের কর্মীরা হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। এ সময় সাময়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে জ্যেষ্ঠ নেতারা এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

প্রতিনিধি সভায় নাছির উদ্দীন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার কাছে প্রশ্ন করেছেন অনেকে। আমাদের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছেও প্রশ্ন করেছেন। সিটি নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে কিছু প্রার্থী কীভাবে মনোনয়ন পেলেন? আসলে তো আমরা কোনো কিছু জানি না। এই কাউন্সিলর প্রার্থীকে কারা মনোনয়ন দিয়েছেন, এটা কি আমরা জানি? আমাদের জানামতে চট্টগ্রামের কেউ এই মনোনয়নপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত নন।’

গণমাধ্যমকর্মীদের সাক্ষী রেখে মেয়র বলেন, ‘আজকে যে বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের রিকমনডেশন (সুপারিশ) করা হয়েছে, তারা কারা? তাঁরা কি জেনেশুনে রিকমনডেশন করেছেন? আমার ধারণা, তাঁরা জেনেশুনে করেননি। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে তাঁরা এ কাজ করেছেন। তাঁরা যে কাজ করেছেন, এর দ্বারা কি সংগঠনের কল্যাণ হবে? মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে? এই জনপ্রতিনিধিরা মানুষের কি কোনো কল্যাণমূলক কাজ করতে পারবেন? তাঁরা তো জনপ্রতিনিধি হতে যাচ্ছেন, বিগত দিনে তাঁদের কী কর্মকাণ্ড ছিল? এখনো তাঁরা তো বিতর্কিত। তাহলে তাঁরা কীভাবে মনোনয়ন পেলেন?’

মেয়র একপর্যায় বলেন, ‘আমার নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ড যে মনোনয়ন দিয়েছেন, সেটাই আমার কাছে শিরোধার্য। আমি সেভাবেই কাজ করছি এবং করব। কাজ করে প্রমাণ করে দেব আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শতভাগ অনুগত এবং জাতির জনকের আদর্শ অন্তরে ধারণ করি।’

মেয়র বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বারবার বলেছেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) নীতি অনুসরণ করছেন। তাঁর একজন কর্মী হিসেবে সেটা আমরা অন্তরে ধারণ করি কি না? আজ সময় এসেছে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করার।’

নাছির বলেন, ‘আমাদের শুধু বক্তব্য দিলেই হবে না। সুন্দর কথা বললাম, হাত নাড়লাম সেটাতে দায়িত্ব শেষ নয়। অন্তরে কী ধারণ করি, বাস্তবে কী করি, সেটাও কিন্তু একটি বিষয়। সাধারণ মানুষ কিন্তু বোকা নয়। তাঁরা জানেন, তাঁরা বোঝেন, তাঁরা দেখেন। আমি যদি সুন্দর কথা বলি আর অসুন্দর কাজ যদি করি, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা কোনোভাবে অর্জন করতে পারব না। সাধারণ মানুষের মন জয় কখনো করতে পারব না।’

সভায় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস বলেন, ‘আমাদের শত্রু এখন বিরোধী কোনো সংগঠন নয়। আমরা নিজেরা নিজেদের শত্রু হয়ে যাচ্ছি। যুবলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা আপনাদের ভাইকে শত্রু বানাবেন না, ভাইদের শত্রু ভাববেন না। তাঁদের কাছে টেনে নিন। কারণ, এই সংগঠন গড়ে তুলতে অনেকের ত্যাগ রয়েছে।...আপনাদের কারণে যেন শেখ ফজলুল হক মনির হাতে গড়া যুবলীগের মাথা হেঁট না হয়।’