মুজিব বর্ষেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ছাত্রলীগের

নোয়াখালী ও খুলনায় পৃথক ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ছবি: প্রথম আলো
নোয়াখালী ও খুলনায় পৃথক ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ছবি: প্রথম আলো

মুজিব বর্ষেই জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়।

নোয়াখালী ও খুলনায় পৃথক ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রশিবিরের সশস্ত্র হামলায় আহত ছাত্রলীগ নেতা রাবিকুল ইসলাম (২৫) গতকাল সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একই দিন খুলনার কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাদিউজ্জামান ওরফে রাসেলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় এই ঘটনা ঘটে। এই দুই হত্যার প্রতিবাদে গত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের আশপাশে জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা ঘুরঘুর করে—এমন অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ সমাবেশে তাঁর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

সমাবেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ‘শিবির যখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে, তখন অনেকে চুপ থাকেন। পক্ষেও বলেন না, বিপক্ষেও বলেন না। সেই সুশীলদের উদ্দেশে আমি বলব, আপনাদের কেন এত চুলকানি? ছাত্রলীগ আছে বলেই আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াত-শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে আপনারা ঘুমাতে পারবেন না। জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা আপনাদের বাসায় গিয়ে হত্যা করবে। তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে। ছাত্রলীগ কখনোই জামায়াত-শিবিরকে মেনে নেবে না।’

দেশের আনাচকানাচে যত শিবির ও সন্ত্রাসী আছে, তাদের গণধোলাই দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আল নাহিয়ান খান। ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা আছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, ডাকসুর তথাকথিত ভিপির আশপাশে জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা ঘুরঘুর করে। ডাকসুর ভিপি শিবিরকে পাশে নিয়ে কাজ করলে আমরা মেনে নেবে না। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী দিনরাত মাঠে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই শিবির-ছাত্রদল-সন্ত্রাসীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার না করে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকলে জামায়াত-শিবির ভয়ে থাকে।’

বাংলাদেশে ছাত্রশিবিরের কোনো স্থান হবে না—এমন মন্তব্য করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আমরা যে চিত্র দেখেছি, জামায়াত-শিবির সেই চিত্রের পুনরাবৃত্তি করতে চায়। জামায়াত-শিবিরের চেহারা দেখলেই আমরা বুঝতে পারি।’

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ছাত্রলীগের একজন নেতা-কর্মীও বেঁচে থাকলে বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান হতে দেবে না। সারা দেশে জামায়াত-শিবিরকে আপনারা দাঁতভাঙা জবাব দেবেন।’

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘অনেক সয়েছি, অনেক সুশীলতা দেখেছি, অনেক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা দেখেছি। আজকে আমার ছাত্রলীগের ভাই হত্যার শিকার হয়েছে। কোথাও কোনো টক শো দেখতে পাচ্ছি না। কেন কোথাও কোনো বুদ্ধিজীবীরা কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ-মানববন্ধন করছে না? আমি বলতে চাই, মুজিব-আদর্শের সৈনিক হিসেবে রক্তের প্রতিশোধ রক্ত দিয়েই নিতে হবে। আর কোনো ছাড় হবে না।’

সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আমি বলে দিতে চাই, কাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। কোনো ভিপি-চিপি কারও পেছনে দাঁড়িয়ে, কারও ছত্রচ্ছায়ায় শিবিরের কার্যক্রম চলতে দেখলে আপনারা সব কটাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেবেন। সকল জঙ্গিবাদী, উসকানিবাদী ও বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল থেকে চলমান ছাত্ররাজনীতি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেনে নিতে পারি না।’

ভিপি নুরুলকে ইঙ্গিত করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধির তকমা নিয়ে আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডানপন্থী পপুলিস্ট রাজনীতির উত্থান ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শহীদের রক্তস্নাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ কমিউনাল গডফাদারদের উত্থান হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, ছাত্রলীগের বিনয়কে দুর্বলতা ভাববেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তৈরির চেষ্টা করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ছাত্রলীগ রক্তের জবাব রক্তেই দিতে জানে।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মুজিব বর্ষেই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করবেন। এটিই হবে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য মুজিব বর্ষের সবচেয়ে বড় উপহার।

ছাত্রলীগের কোনো কর্মীর রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হলে কিছু গণমাধ্যমকর্মীর মুখ বোবা হয়ে যায়—এমন অভিযোগ করে সাদ্দাম হোসেন প্রশ্ন রাখেন, ‘তথাকথিত মানবাধিকারকর্মী, তথাকথিত গণমাধ্যমকর্মী ও তথাকথিত গণতন্ত্রের ভেকধারীরা আজকে কোথায় রয়েছেন?’

সমাবেশ থেকে একই দাবিতে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ছাত্রলীগের সব ইউনিটকে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশের আগে মধুর ক্যানটিন থেকে মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। এই কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।