এসি ল্যান্ডের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জেরে মাদক মামলায় সাজার অভিযোগ

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনের পেছনে মাদকসেবনের অভিযোগে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মচারীর বৃদ্ধা মা জেলা প্রশাসকের কাছে ছেলের ডোপ টেস্টের আবেদন জানিয়েছেন।

মায়ের দাবি, তাঁর ছেলে মাদক তো দূরের কথা, ধূমপানও করেন না। ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা–কাটাকাটির জেরে তাঁর ছেলেকে অন্যায়ভাবে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে গতকাল সোমবার রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে এ আবেদন করেছেন তিনি।

সাজাপ্রাপ্ত ওই কর্মচারীর নাম মো. কাউছার আলী। তিনি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক। কাউছারের বাড়ি পবা উপজেলার বায়া গ্রামে। তাঁর মায়ের নাম নুরুন্নাহার (৫০)। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা সেবনের দায়ে কাউছারকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন পুঠিয়ার ইউএনও ওলিউজ্জামান।

কাউছারের মা নুরুন্নাহার তাঁর আবেদনে বলেছেন, তিনি বিধবা। ছেলে কাউছার আলীই তাঁর বাঁচার একমাত্র অবলম্বন। ছেলের সঙ্গে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পুঠিয়ার সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) রুমানা আফরোজের কথা-কাটাকাটি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে কার্যালয়ে ডাকেন ইউএনও। দেখা করতে গেলে মাদক মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

নুরুন্নাহারের দাবি, ২৭ ফেব্রুয়ারি নিজের কার্যালয়ে বসে অপর এক কর্মকর্তার সঙ্গে ভিপি কেসের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন এসি ল্যান্ড। আলোচনার একটি প্রসঙ্গে পাশ থেকে কাউছার আলী এসি ল্যান্ডকে বলেন, ‘ভিপি কেসের লোকজন কেউ অফিসে আসেন না।’ কাউছার কথা বলায় এসি ল্যান্ড বিরক্ত হন। তিনি কাউছারকে থামতে বললে কাউছার আবার বলেন, ‘আমি ভিপি কেসের লোকদের অন্তত ৫০০টি নোটিশ সরবরাহ করেছি। কিন্তু তাঁরা কেউ আসেন না।’ তখন এসি ল্যান্ড খেপে গিয়ে কাউছারকে বলেন, ‘তুমি আবার কথা বলছ। তোমাকে আমি টাঙাব।’

নুরুন্নাহার বলেন, এসি ল্যান্ড এমনভাবে বলায় কাউছার তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘এটা অফিশিয়াল ভাষা নয়। আপনি এমনভাবে কথা বলতে পারেন না।’ তখন এসি ল্যান্ড কাউছারের উদ্দেশে বলেন, ‘কালকেই বুঝবে আমি কী করতে পারি।’

নুরুন্নাহার বলেন, গত শনিবার কাউছারকে অফিসে ডাকা হয়। এসি ল্যান্ডের সঙ্গে কথা–কাটাকাটির জেরেই তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মাদকসেবনের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। কাউছারের ছয় মাস বয়সে তাঁর বাবা মজিবর রহমান মারা যান। কাউছার এতিমখানায় বড় হয়েছেন। কোটায় আবেদন করে ভূমি অফিসে চাকরি হয়েছে। কাউছার কখনো মাদক সেবন করেননি। ন্যায়বিচার পেতে ডোপ টেস্টের আবেদন করা হয়েছে।

পুঠিয়ার ইউএনও মো. ওলিউজ্জামান স্বাক্ষরিত কাউছারের কারাদণ্ডাদেশে বলা হয়েছে, ইউএনওর বাসভবনের পেছনে ইয়াবা সেবনের মাধ্যমে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় জনসাধারণের শান্তি বিনষ্ট করার অপরাধে কাউছারকে ওই সাজা দেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ইউএনও ওলিউজ্জামান বলেন, ‘সহকারী কমিশনারের সঙ্গে তর্কবিতর্কের বিষয়টি আলাদা। এটি তাঁর জানা নেই। মাদক সেবনের বিষয়টি জানার পর কাউছারকে সাজা দেওয়া হয়েছে।’ 

কথা-কাটাকাটির ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুমানা আফরোজ বলেন, কাউছারের নামে মাদক সেবনসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। কথা–কাটাকাটির জেরে কাউছার আলীকে সাজা দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে রুমানা আফরোজ বলেন, সেই ঘটনার সঙ্গে এই সাজার কোনো সম্পর্ক নেই।

জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, এ রকম তথ্য তাঁর কাছে নেই। তবে তাঁর কার্যালয়ের সিল দেওয়া আবেদনের একটি কপি পাওয়া গেছে।