যমুনার চরের মাটি বিক্রি করছেন আ.লীগ নেতা
বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম যমুনা নদীর চর থেকে বালু ও মাটি কেটে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত রোববার রাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী আছাদুল হক তাঁর বিরুদ্ধে ধুনট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ওই অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে নদীর পশ্চিম পাশে বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠেছে। ওই সব চরের অনেক স্থানে স্থানীয় কৃষকেরা চাষ করছেন ভুট্টা, পাট, মিষ্টি আলুসহ নানা ধরনের ফসল। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতা শহিদুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন ওই সব চর থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে, আবার কোথাও শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে প্রতিদিন কয়েক শ ট্রাক এবং ট্রাক্টরে বহন করে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প, ইটভাটা ও বসতভিটার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। এভাবে মাটি কাটার ফলে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
ট্রাকচালকেরা জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ ডোবা এবং গর্ত ভরাটের জন্য প্রতি ট্রাক মাটি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। পাউবো বগুড়া কার্যালয় থেকে জানা গেছে, যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে ভান্ডারবাড়ি ও ভুতবাড়ি গ্রামের কাছে ২০১৭ সালে চার কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে পাউবো। এই প্রকল্প এলাকা থেকে বর্ষার সময় খননযন্ত্র বসিয়ে চলে বালু উত্তোলন। আর শুষ্ক মৌসুমে খননযন্ত্র ও কোদাল দিয়ে কাটা হয় মাটি। এতে তীর সংরক্ষণ প্রকল্প ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভান্ডারবাড়ি ও কৈয়াগাড়ি গ্রামের ১০-১২ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চর থেকে মাটি কেটে গর্ত করার প্রভাব বোঝা যাবে বর্ষা মৌসুমে। তখন এই চর পানিতে তলিয়ে যাবে। এই মাটি কাটার ফলে ওই সব গর্তে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে তীর সংরক্ষণ প্রকল্প নদীতে বিলীন হবে।
উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলামের দাবি, তিনি এলাকাবাসীর অনুরোধে স্থানীয় একটি ঈদগাহ ভরাটের চুক্তি নিয়েছেন। অন্য কোথাও তিনি ওই চরের মাটি বিক্রি করছেন না। অনেক আগে থেকেই চর থেকে মাটি বিক্রির ঘটনা ঘটছে। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
পাউবোর বগুড়ার সহকারী প্রকৌশলী আছাদুল হক বলেন, যমুনার চর থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ক্ষতি হচ্ছে। তদন্ত করে শহিদুল ইসলামের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, যমুনার চর থেকে মাটি বিক্রির বিষয়ে পাউবোর অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।