শিকড় থেকে আসবাব

গাছের শিকড় দিয়ে আসবাব বানাচ্ছেন আজিজুর রহমান। সম্প্রতি কক্সবাজারের চকরিয়ায় নিজের বাড়িতে।  ছবি: প্রথম আলো
গাছের শিকড় দিয়ে আসবাব বানাচ্ছেন আজিজুর রহমান। সম্প্রতি কক্সবাজারের চকরিয়ায় নিজের বাড়িতে। ছবি: প্রথম আলো

গাছের শিকড় দিয়ে আসবাব বানান তিনি। একেকটি আসবাব যেন একেকটি শিল্পকর্ম। এরই মধ্যে এলাকার বাইরেও নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন।

তাঁর নাম আজিজুর রহমান (৫২)। বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের সুরাজপুর গ্রামে। পাঁচ বছর আগে শখের বশে শুরু করেছিলেন। আজ এই আসবাব বিক্রি করে জোটে তাঁর রুটিরুজি।

২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপির সদস্য ছিলেন আজিজুর। নানা কারণে আর নির্বাচন করেননি। এরপর বেকারজীবন কীভাবে পার করবেন, সেই চিন্তা করতেই গাছের শিকড় থেকে আসবাব বানানোর বিষয়টি মাথায় আসে। এরপর নেমে পড়েন কাজে। শুরু করেন গাছের পরিত্যক্ত শিকড় সংগ্রহের কাজ। আগে থেকেই কাঠের কাজ জানা ছিল তাঁর।

এখন পর্যন্ত শিকড় থেকে চেয়ার, ডাইনিং টেবিল, টি-টেবিল ও খাট—এই চার ধরনের আসবাব তৈরি করেছেন আজিজুর রহমান। প্রতিটি আসবাব বিক্রি করেছেন ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায়। দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আজিজুর বলেন, একটি
আসবাব বানাতে দেড় থেকে আড়াই মাস সময় লাগে। এটা শৈল্পিক কাজ। তাই দাম খুব কম রাখা যায় না।

সেগুন, গর্জন ও চাপালিশগাছের শিকড় থেকে আসবাব বানান আজিজুর রহমান। সেগুন ও গর্জনগাছের শিকড়ে বানানো আসবাবের দাম বেশি পড়ে। আর বয়সী গাছের শিকড়ে আসবাব ভালো হয়। একেকটি শিকড় ৮ থেকে ১৪ হাজার টাকায় কেনেন আজিজুর। মাঝেমধ্যে তিনি নিজেই বেরিয়ে পড়েন শিকড় সংগ্রহের কাজে।

সম্প্রতি আজিজুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি বসতঘরের আঙিনায় বসে আসবাব তৈরির কাজ করছেন তিনি। যন্ত্রপাতি হিসেবে ব্যবহার করছেন বাটালি, হাতুড়ি, করাত, রেতি, রাঁধা, বর্মাসহ ছোট ছোট কিছু যন্ত্র। উঠানের আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে নতুন বানানো ছয়টি ডাইনিং ও চারটি টি-টেবিল, দুটি চেয়ার ও একটি খাট। উঠানের এক কোণে দেখা গেল কিছু গাছের শিকড়।

আজিজুর রহমান একাই কাজ করেন। তাঁর কোনো কর্মচারী নেই।

আজিজুর রহমান বললেন আসবাব বানানোর পদ্ধতি, ‘শিকড়গুলো সংগ্রহ করে সেগুলোর আকার-আকৃতি বুঝে কেটেছেঁটে চেহারা বদলে দিই। পরিণত করি শৈল্পিক আসবাবে। একটি আসবাব বানাতে শুরুতে এসব শিকড়ের অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেওয়া হয়। পরে বার্নিশ ও ফিনিশিং দিয়ে ব্যবহারোপযোগী ও দৃষ্টিনন্দন করা হয়।’ আজিজুরের ভাষায়, অনেকেই তাঁর কাজ দেখতে আসেন। কিন্তু যাঁরা শৌখিন মানুষ, তাঁরা এ আসবাব কিনে নেন। বছরে পাঁচ থেকে ছয়টি আসবাব বিক্রি করতে পারেন আজিজুর রহমান।

আজিজুরের কাজ এলাকায় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, জানালেন সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিমুল হক। তিনি বলেন, নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে যে কেউ চাইলে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। এর সফল দৃষ্টান্ত আজিজুর রহমান।

আজিজুর রহমানকে কীভাবে উৎসাহিত করা যায়, সেটি বিশেষভাবে নজর দেবেন বলে প্রথম আলোকে জানান কক্সবাজার বিসিকের শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রিদুয়ানুর রশিদ।

নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন আজিজুর। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে একটি কারখানা করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।