নগরকাননে পাহাড়ি উদাল

নগরকাননে ফোটা পাহাড়ি উদাল। সম্প্রতি বাংলা একাডেমিতে।  ছবি: মামুনুর রশীদ
নগরকাননে ফোটা পাহাড়ি উদাল। সম্প্রতি বাংলা একাডেমিতে। ছবি: মামুনুর রশীদ

প্রাণ–প্রকৃতির রূপের সন্ধানে এক জীবন কাটিয়ে দেওয়া ‘নিসর্গসখা’ দ্বিজেন শর্মা পৃথিবীর মায়া ছেড়েছেন প্রায় আড়াই বছর হলো। তবে মৃত্যুর কয়েক মাস আগে বাংলা একাডেমির এনামুল হক ভবনের পাশে তাঁর নিজের হাতে লাগানো উদালের ডালে প্রথমবারের মতো ফুল ফুটেছে।

প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক ও তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন জানান, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে উদালগাছটি লাগানোর সময় তিনিও দ্বিজেন শর্মার সঙ্গে ছিলেন। চারাটি তিনি সংগ্রহ করেছিলেন বন বিভাগের নার্সারি থেকে।

মোকারম হোসেন বলেন, ‘আমাদের শহুরে উদ্যানে উদাল খুব বেশি নেই। সে কারণেই উদালের সঙ্গে আমাদের খুব একটা চেনাজানা নেই। তা ছাড়া এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা।’

সম্প্রতি একাডেমির এনামুল হক ভবনে ঢুকতে বাঁ পাশে লম্বা ডাঁটায় গুচ্ছবদ্ধ কমলা-হলুদ রঙের ফুটন্ত ফুলগুলো চোখে পড়ে। একই জায়গায় ফুটে থাকা বড় আকারের ডালিয়া ও গাঁদার মধ্য থেকে ওই ফুলগুলো খুব সহজেই আলাদা করা গেল। গাছটি লম্বায় বড়জোর ১০ ফুট। শীতে সব পাতা ঝরে গেছে। কাণ্ডের রং সাদাটে।

মোকারম হোসেন বলেন, উদালগাছ লম্বায় ২০ মিটার বা তার চেয়েও উঁচু হতে পারে। শীতে সব পাতা ঝরিয়ে একেবারে উদোম হয়ে যায়। পাতা একটু বড় ও খাঁজকাটা। স্থানীয়ভাবে এটা চান্দুল নামেও পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Sterculiaceae villosa। বাংলা একাডেমি ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যান ও মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে উদালের দেখা পাওয়া যায়।

উদাল মাঝারি আকৃতির পত্রমোচী গাছ। কচি ডাল, পাতার বোঁটা ও মঞ্জরি রোমশ। বোঁটা পাতার মতোই লম্বা। উপবৃতি অনেকটা বড়, চওড়া ও বর্শাকৃতির। মাঘ মাসের শেষ ভাগে শীতের তীব্রতা একটু কমে এলেই উদালের ফুল ফোটার প্রস্তুতি শুরু হয়। বসন্তের শুরুতে অজস্র থোকা থোকা ফুলে গাছ ভরে ওঠে। পত্রহীন ডালপালায় এমন পুষ্পের প্রাচুর্য খুব সহজেই সবার নজর কাড়ে।

দেখা যায়, হলুদ রঙের ছোট ছোট ফুল প্রায় দেড় সেন্টিমিটার চওড়া। ফুলের ভেতরটা কমলা রঙের। সকালে সূর্যের আলোয় তা চকচক করে উঠছে। মোকারম হোসেন আরও জানান, ফুল ঝরে পড়তে না–পড়তেই উদালের ডালের আগায় ফল আসতে শুরু করে। পাকা ফলের রং হয় গাঢ় লাল। বংশবৃদ্ধির সহজ উপায় বীজ।