সিলেট জেলা বিএনপি : পুনর্গঠনে নেমে বিভক্তির সুর

দল চাঙা করতে তৃণমূল পুনর্গঠনে নেমে বিভক্তির মুখে পড়েছে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। গত শনিবার রাতে জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার ১৮টি শাখার নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পরদিনই ২৫ সদস্যের জেলা কমিটির ৯ জন বিবৃতি দিয়ে আহ্বায়কের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন। জেলার আহ্বায়ক কমিটির একাংশের বিবৃতির সূত্র ধরে এখন ১৮টি শাখা কমিটির নেতৃত্বে থাকা ও বাদ পড়া নেতাদের একটি অংশ সরব হয়েছে। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার ৯ জন সদস্যের সঙ্গে মিলে উপজেলা ও পৌর শাখার বিলুপ্ত কমিটির নেতারা সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এতে তৃণমূল পুনর্গঠনে নেমে বিভক্তি স্পষ্ট হওয়ার অবস্থায় পড়েছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। 

সিলেটে মেয়াদ পেরোনোর দুই মাসে আগেই গত বছরের ২ অক্টোবর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে কেন্দ্র থেকে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আহ্বায়ক মনোনীত হন জেলা বিএনপির গত কমিটির সহসভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদার। এর প্রায় চার মাস পর জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌর শাখা পুনর্গঠনে ১৮টি সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা হয়। 

১৮টি শাখা কমিটির আহ্বায়কেরা  হচ্ছেন সদর উপজেলায় তারেক কালাম, দক্ষিণ সুরমায় সিরাজুল ইসলাম, কানাইঘাটে আব্বাস উদ্দিন, কানাইঘাট পৌর শাখায় আবিদুর রহমান, জকিগঞ্জে কাওছার রশিদ, জকিগঞ্জ পৌর শাখায় ইকবাল আহমদ, জৈন্তাপুরে এ বি এম জাকারিয়া, গোয়াইনঘাটে লুৎফুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জে আবদুল মান্নান, বিশ্বনাথে মো. গৌছ খান, বিশ্বনাথ পৌর শাখায় তালেব আলী, ওসমানীনগরে জরিদ আহমদ, বালাগঞ্জে আবদুর রশিদ, গোলাপগঞ্জে আবদুল গফুর, গোলাপগঞ্জ পৌর শাখায় হাসান ইমাদ, বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম খান, বিয়ানীবাজার পৌর শাখায় মো. নুরুল হুদা ও ফেঞ্চুগঞ্জে ইফতেখার উদ্দিন। 

ঘোষিত কমিটিগুলোকে জেলার আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ বলে অভিযোগ করেছেন জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাইয়ুম চৌধুরী, আশিক উদ্দিন, আবদুল মান্নান, এমরান আহমদ চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন লস্কর, আহমেদুর রহমান চৌধুরী, ইসতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, হাসান পাটোয়ারী ও মাহবুবুল হক চৌধুরী। তাঁদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন উপজেলা ও পৌর শাখার বর্তমান কমিটির অর্ধশতাধিক নেতা। তাঁদের সঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতাদের একটি অংশ সক্রিয় হওয়ায় জেলা বিএনপির আহ্বায়কবিরোধী একটি বলয় তৈরি হয়েছে। বলয়টি আজ মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষিত কমিটি বাতিল ও জেলার আহ্বায়কের পদত্যাগ দাবি করতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিবৃতি দেওয়া ৯ সদস্যের একজন এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূল পুনর্গঠন করতে গিয়ে আহ্বায়কের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ জানিয়েছি আমরা। এতে তৃণমূল থেকে অনেকেই একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। আমরা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। তবে সংবাদ সম্মেলনে আমরা নেই। যাঁরা সংবাদ সম্মেলন করছেন, সেটা তাঁদের বিষয়।’ 

তৃণমূলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি রয়েছে জেলার ১৩টি উপজেলার অন্তত ১০টি উপজেলা ও ৩টি পৌর শাখার নেতাদের মধ্যে। এক নেতা বলেন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে ছাত্রদল করেন এমন নেতাদেরও রাখা হয়েছে। অথচ সেখানে বাদ পড়েছেন জ্যেষ্ঠ ও ত্যাগী অনেক নেতা।

তবে জেলার আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি বড় দল। এ রকম কিছু ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকবেই। এগুলো মোকাবিলা করেই এগোতে হবে। প্রায় চার মাস তৃণমূলে সভা, যোগাযোগ করেছি। এখন ২১ সদস্যের মধ্যে সবাইকে তো জায়গা দেওযা যাবে না। তাই এ রকম কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তবে তা মিটে যাবে।’ আহ্বায়ক কমিটির ৯ জনের বিবৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ২৫ জন সদস্য। এর মধ্যে ৯ জন সদস্য বিবৃতি দিয়েছেন। বাকি ১৬ জন সদস্য একমত। সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামত নিয়েই তো চলতে হবে।’