খালেদার স্বাস্থ্যের সঠিক রিপোর্ট না দিতে চিকিৎসকেরা বাধ্য হয়েছেন: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সঠিক রিপোর্ট না দিতে সরকার চিকিৎসকদের বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পানি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির এক মানববন্ধনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড তাঁর স্বাস্থ্য বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিবেদন সঠিক নয় দাবি করে আজ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে আজকে পিজি হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) ডাক্তাররা, যাঁদের এই দেশের মানুষ শ্রদ্ধা করে, নির্ভর করে, তাঁরা সঠিক রিপোর্ট দিতে পারলেন না। সরকার তাঁদের বাধ্য করেছে সঠিক রিপোর্ট না দেওয়ার জন্য। দুর্ভাগ্য আমাদের বিচার বিভাগ, উচ্চ আদালত সঠিক বিচার করতে পারেন না। কারণ এখানে একনায়কতন্ত্রের রাষ্ট্র, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা।’

মির্জা ফখরুল জানান, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। ২৫ ফেব্রুয়ারি যে ব্লাড পরীক্ষা হয়েছে, সেখানে খালেদার ফাস্টিং সুগার ১৪ দশমিক ৫ ছিল। ফখরুল বলেন, নিয়মিত সুগার এই মাত্রায় হলে তা হার্ট, কিডনিসহ লাংয়ে প্রভাব ফেলতে পারে।

সরকার আর্থিক খাত, শিক্ষা-স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলতে কিছু নেই। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধান করতে পারেনি। রোহিঙ্গা সমস্যা সরকার নিজেই জিইয়ে রেখেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, কারণ পশ্চিমা বিশ্ব থেকে যে সাহায্য আসে, তার ভাগ-বাঁটোয়ারা ক্ষমতাসীনেরা পায়।’ তিনি আরও বলেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধে সরকার কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সীমান্তের নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা হয়নি। ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে বাংলাদেশের কথা বলা হলেও সরকার সেটা নিয়ে কথা বলতে পারে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নতজানু, পুতুল সরকার দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। স্বাধীনতার মাসে বলতে চাই, স্বাধীনতাকে তারা রক্ষা করতে পারবে না। তারা বিক্রি করে দিচ্ছে। আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে, জেগে উঠতে হবে।’ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতেও তিনি সবাইকে জেগে ওঠার আহ্বান জানান।

পানি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পানির দাম কমপক্ষে পাঁচবার বেড়েছে। সেই পানি মুখে দেওয়া যায় না। বিদ্যুতের দাম আটবার বেড়েছে। কারণ, কুইক রেন্টালের নামে যারা লুট করেছে, তাদের ভর্তুকি দেওয়ার জন্য জনগণের পকেট কেটে তারা বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, এই সময়ে বিদ্যুৎ–পানির দাম বাড়িয়ে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষকে চরম অসহায়ত্বের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি, তাই জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বোঝার ক্ষমতা নেই। ১২ বছর ধরে জনগণকে যেসব অত্যাচার করা হয়েছে, তা জনগণ আর মেনে নেবে না। এই সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। পানি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যাহার করা না হলে জনগণের উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান প্রমুখ।