মশা নিধনে 'সিরিয়াসলি মাঠে নামার' কথা জানালেন এলজিআরডিমন্ত্রী

মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় আজ মশকনিধন কর্মসূচিতে যান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ছবি: নাসরিন আকতার
মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় আজ মশকনিধন কর্মসূচিতে যান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ছবি: নাসরিন আকতার

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘এটা মানতেই হবে, বিশ্বের কোনো দেশই মশামুক্ত নয়। বাংলাদেশও মশামুক্ত নয়। বিশ্বের সব দেশেই কখনো কখনো মশা বাড়ে, কখনো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। এ সময় মশার প্রজনন বেশি হয়। এ জন্য আমরা সিরিয়াসলি মাঠে নামছি।’

মশকনিধনে পর্যাপ্ত ওষুধ, যন্ত্র ও লোকবল থাকলেও মশা কমছে না কেন? এক সংবাদকর্মীর এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। আজ বুধবার মিরপুরের রূপনগর এলাকায় রূপনগর খালের পাশে মশকনিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আয়োজিত ‘বিশেষ মশকনিধন, পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি’তে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এ সময় ডিএনসিসির নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা, ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর মঞ্জুর হোসেন, ডিএনসিসির অঞ্চল-২-এর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে রূপনগর খালটি অপরিষ্কার ছিল, তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। রূপনগর খাল পুনঃখননের জন্য কাজ করা হচ্ছে। অনতিবিলম্বে ওয়াসাকে নির্দেশ দিয়েছি খাল পুনঃখননের কাজ শুরু করার জন্য। এক দিনও সময় ক্ষেপণ আমরা মেনে নেব না। এ ছাড়া মশা উৎপাদন হচ্ছে, এমন অসংখ্য পরিত্যক্ত জায়গা আছে। সেগুলোতে ওষুধ দেওয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ হচ্ছে। আমি জানি মশার প্রজনন হচ্ছে। যেসব কারণে মশার প্রজনন হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে কাজ করার জন্যই আজ মাঠে এসে দেখছি।’

এদিকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম রূপনগর আবাসিক এলাকায় যাবেন বলে সকাল থেকেই রূপনগর আবাসিক এলাকার ২৩ নম্বর সড়কের পশ্চিম অংশে জড়ো হতে থাকেন এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী, ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা নবনির্বাচিত মেয়র আসার পর থেকেই স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা যেখানে যান, সেখানেই মশকনিধনের এই কর্মসূচি জনসভায় পরিণত হয়।

উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশক নিধনে মাঠে কী কী সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কীভাবে সেগুলো কাজ করে, তা স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে দেখানোর জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ৮-১০টি ফগার মেশিন, মশার লার্ভা মারার লার্ভিসাইডিং মেশিন, ভেহিক্যাল মাউনটেড ফগার মেশিন, খালে তরল ওষুধ ছিটানোর হুইলব্যারো মেশিন, নালা পরিষ্কারের একটি সাকারযন্ত্র, সড়ক ঝাড়ু দেওয়ার দুটি আধুনিক রোড সুইপার যন্ত্র আনা হয়। সেগুলো রূপনগর এলাকার সড়কের ওপরই রাখা হয়। আর অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর দুপুরে খোলা সড়কে ফগিং করে ধোঁয়া দেওয়া হয়।

রূপনগর খালের পাশে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন অনেক কারণে মশার প্রজনন হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। খাল নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। এগুলো নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোথাও কোনো দখল অথবা দায়িত্বহীনতাকে বরদাশত করা হবে না।’

এলজিআরডিমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পিত ব্যবস্থার মাধ্যমে মশা নিধন করতে হবে। এখন বেশির ভাগ কাউন্সিলর নবনির্বাচিত হলেও আগে থেকেও অনেকে দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের সবাইকে নিজ নিজ ওয়ার্ডের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে।

রূপনগর এলাকায় মশক নিধন কর্মসূচিতে খালের কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ চলছে। ছবি: নাসরিন আক্‌তার
রূপনগর এলাকায় মশক নিধন কর্মসূচিতে খালের কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ চলছে। ছবি: নাসরিন আক্‌তার

মশার ওষুধ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মশা নিধনের জন্য ছয় মাসের ওষুধ আর সরঞ্জাম আছে বলে সিটি করপোরেশন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর যে লোকবল দরকার, তা-ও দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কাজ বন্ধ থাকার কোনো কারণ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব বিষয় খোঁজ নিচ্ছি। মশার জন্য যা করার দরকার, সব করা হচ্ছে।’

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপস্থিত মানুষের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, সব প্রাণীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে যায়। সারা পৃথিবীতে অভিযোজন ও সংক্রমণমুক্ততার কারণে মশার মতো কীটপতঙ্গের পরিবর্তন হয়। এটাকেও আমলে নিতে হবে। সেসব ক্ষেত্রে সব জায়গায়ই সময়ে সময়ে ওষুধ পরিবর্তন করতে হয়। এ ছাড়া এসব কীটনাশক যেহেতু কীট ধ্বংস করার জন্য তৈরি, সে জন্য মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কোনো ওষুধ ছিটানো যাবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি পাওয়া ওষুধই ছিটাতে হবে। গত বছর সিটি করপোরেশনের ওষুধ নিয়ে কিছু কথা উঠেছিল এবং স্বল্পতা ছিল। এবার তা নেই।

মন্ত্রী বলেন, মশা সারা বছরই থাকে। তবে এডিস বর্ষাকালে বেশি হয়। এবারের কাজের পর দৃশ্যমান কিছু ফল পাওয়া যাবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। নতুন এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি এবং পরিস্থিতি অনেক খারাপ। সেসব এলাকার জন্য কী করা হচ্ছে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সারা দেশে কাজ করছি।’

এলাকার মশার পরিস্থিতি জানতে কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা বলেন, সন্ধ্যার দিক মশার কামড় বেড়ে যায়। বসে থাকা যায় না।

রূপনগর আবাসিক এলাকার বদরুল আলম বলেন, ‘মশার উপদ্রব কেমন, তা বাস্তবে না দেখলে বোঝানো যাবে না। ৮ থেকে ১০ দলার ওপরও মশা কামড়ায়। সন্ধ্যা হলে বাচ্চারা পড়তে বসতে পারে না। রূপনগর এলাকায় খাল ও ঝিল বেশি। এখানে বেশি মশা জন্ম হয়। সিটি করপোরেশন বা ওয়াসা এত দিন ধরে এসব খাল-বিল পরিষ্কার করেনি। আর যেসব ওষুধ দিচ্ছে, তাতে মশা কমছে না।’

আরেক বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ‘নির্বাচনের সময় মশা নিয়ন্ত্রণে কোনো ওষুধ বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়নি। এ কারণে মশা বেড়েছে।’