মন্ত্রী রেজাউলের বিরুদ্ধে সাবেক সাংসদ আউয়ালের যত অভিযোগ

সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল।
সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল।

পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় জামিন পাওয়ার পরের দিন আজ বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং স্থানীয় সাংসদ শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আদালতকে প্রভাবিত করাসহ নানা অভিযোগ করেন। পিরোজপুর শহরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল অভিযোগ করেন, পিরোজপুর-১ (সদর, নাজিরপুর, নেছারাবাদ) আসনের সাংসদ ও মন্ত্রী রেজাউল করিম দুদককে প্রভাবিত করে তিনি ও তাঁর স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে তিনটি মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার নিজের ও স্ত্রীর জামিন প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, গত রোববার পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানের সঙ্গে মুজিব বর্ষ উদযাপন বিষয়ে আলোচনা করতে যান। তখন জেলা ও দায়রা জজ তাঁদের জানান, মন্ত্রী রেজাউল করিম তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে জামিন দিতে নিষেধ করেন। তাঁর নিষেধ উপেক্ষা করার ক্ষমতা জেলা ও দায়রা জজের নেই।

আউয়াল অভিযোগ করেন, রেজাউল করিম ও তাঁর বাবা কখনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। রেজাউল করিমের জন্ম ১৯৬১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ৯ বছর। ৯ বছর বয়সে তিনি কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন? মন্ত্রী হয়ে তিনি সাত থেকে আট মাসের মধ্যে পিরোজপুর জেলা শহরের পিরোজপুর-নাজিরপুর সড়কে নিজের ও ভাইয়ের নামে দুই কোটি টাকা দামের ১৫ কাঠা জমি কিনেছেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী হওয়ার পর ক্যাসিনো সম্রাট জি কে শামীমের কাছ থেকে রেজাউল করিম, তাঁর ভাই শাহীন ও শাহীনের বন্ধু কামরুজ্জামান তিনটি কালো রঙের দামি গাড়ি উপঢৌকন হিসেবে নিয়েছেন। এ সময় জি কে শামীম বিপুল পরিমাণ ঘুষের বিনিময়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেন। রেজাউল করিম তাঁর ভগ্নিপতি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবুল কাশেম খানকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ভাইবা বোর্ডে নিয়োগ দেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রতিষ্ঠিত নন–এমপিওভুক্ত দারুল কোরআন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডিও লেটার দেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাজাহান খান তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস, পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এস এম বেলায়েত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আউয়ালের মামলার ব্যাপারে এবং জামিন না দেওয়ার জন্য আমি কখনো কোনো প্রভাব খাটাইনি। দুদক তার নিজস্ব তদন্তে এ মামলা দায়ের করেছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

গতকাল পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল এবং তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীন দুদকের মামলায় পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক মো. আবদুল মান্নান জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে পাঠানো আদেশের পর আউয়াল ও লায়লার আইনজীবী আদালতে তাঁদের অসুস্থতার চিকিৎসা প্রতিবেদনসহ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা ও ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করেন। বিচারক ডিভিশনসহ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পর জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে যুগ্ম জেলা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের চিঠি পাঠায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিকেলে আউয়াল ও লায়লার আইনজীবীরা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে পুনরায় জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।