১৭ মার্চের পর অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন দেওয়া হতে পারে: তথ্যমন্ত্রী

‘স্বপ্নের সারথি শাহ আলমগীর’ নামক স্মারক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ অন্য অতিথিরা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
‘স্বপ্নের সারথি শাহ আলমগীর’ নামক স্মারক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ অন্য অতিথিরা। ছবি: সাইফুল ইসলাম

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৭ মার্চের পর অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন দেওয়ার চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক শাহ আলমগীরের ওপরে লেখা ‘স্বপ্নের সারথি শাহ আলমগীর’ নামক স্মারক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন। আজ বুধবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ অনুষ্ঠান হয়।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর রেজিস্ট্রেশন করার জন্য দরখাস্ত আহ্বান করেছিলাম। সেখানে সাড়ে তিন হাজারের বেশি দরখাস্ত পড়েছে। অনলাইন টিভিগুলোকেও আমরা রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে ৫০০-এর বেশি আবেদন পড়েছে। আমরা অনেক আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু পারিনি। কারণ, তদন্তগুলো আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাইনি। বারবার তাগাদা দেওয়ার পর কিছুসংখ্যক রিপোর্ট পেয়েছি। একটি সংস্থা থেকে এক হাজারের বেশি, আরেকটি সংস্থা থেকে এক শর কম প্রতিবেদন পেয়েছি। সুতরাং, একটি সংস্থার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তো রেজিস্ট্রেশন দেওয়া যায় না, সে জন্য আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে প্রথম ধাপেই রেজিস্ট্রেশন দিতে চাই। তাদের রিপোর্ট যেন দ্রুত আসে, সে জন্য অপেক্ষা করছি। ১৭ মার্চের পর থেকে আমরা রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’

চলচ্চিত্র প্রকাশনা ও অধিদপ্তরে সংবাদপত্র প্রচারের সংখ্যা বছরের পর বছর হযবরল অবস্থায় বিরাজ করছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটার শৃঙ্খলার মধ্যে আসা প্রয়োজন। সে জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান। মন্ত্রী বলেন, দেখা যায় যে পত্রিকাগুলো মানুষ চেনে না, সেগুলো এখন ভালো পত্রিকাগুলোর কাছাকাছি চলে গেছে। তিনি এই পরিস্থিতির উত্তরণ চান। এতে সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি তাঁরা এনবিআরেরও সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানান।

সাংবাদিক শাহ আলমগীরকে স্মরণ করে হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি উঁচু মাপের সাংবাদিক ছিলেন, ভালো মানুষ ছিলেন। পিআইবির একজন মহাপরিচালক হিসেবেও একজন দক্ষ ছিলেন। তাঁর সময়ে অনেক কাজ হয়েছে, যা আগে হয়নি। তিনি নিরংহকার, নির্লোভ, প্রচারবিমুখ, মিতভাষী ছিলেন। এমন ভালো মানুষ কম হন। মন্ত্রী বলেন, ‘আজ সমাজে ভালো মানুষের বড় অভাব। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় পৌনে আট বিলিয়ন। মানুষ বাড়ছে কিন্তু ভালো মানুষের সংখ্যা কমছে। আর মানুষ প্রচণ্ডভাবে আত্মকেন্দ্রিক হচ্ছে। মানুষ নিজেকে নিয়ে ভাবে। অন্য কাউকে নিয়ে ভাবে না। শাহ আলমগীরের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বলে জানান তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্রের ব্যাপক বিকাশের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও যুক্ত হয়েছে। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ প্রকাশের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এটা করতে গিয়ে সংবাদের গুণগত মান নষ্ট হয়। বিশেষ করে অনলাইনগুলোর ক্ষেত্রে বেশি হয়। কার আগে কে দেবে, সেই প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অনেক সময় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ হয় না। তিনি প্রেস ইনস্টিটিউট ও প্রেস কাউন্সিলকে ঢাকার বাইরে বড় বড় শহরে কর্মশালা করার আহ্বান জানান। সাংবাদিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যারা অন্য কিছু করে, সেসব নিয়ে কাজ করা দরকার বলে মনে করেন মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘গণমাধ্যমের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ চলে এসেছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর জন্য শাহ আলমগীরের মতো মানুষের দরকার ছিল। আজ গণমাধ্যমের যত ধরনের সংকট আমরা লক্ষ করি, তার একটা বড় কারণ হচ্ছে আমাদের সুপ্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরি করতে পারছি না। এখানে শাহ আলমগীর দায়িত্ব পালন করে চলেছিলেন। শাহ আলমগীরের স্বপ্ন ও রেখে যাওয়া কাজ যে যেখান থেকে পারি বাস্তবায়নের চেষ্টা করব এবং তাঁকে অনুসরণ করে নিজেরা সমৃদ্ধ হব।’

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘শাহ আলমগীর যে সময়ে সাংবাদিকতা করেছেন, সে সময় যে প্রতিকূল অবস্থা ছিল, এখন কিন্তু তার চেয়েও বেশি প্রতিকূল অবস্থা। আমরা যদি তাঁকে সত্যিই স্বপ্নের সারথি ভাবি, তিনি যে আদর্শের জন্য, নীতির জন্য, ন্যায়ের জন্য লড়াই করেছেন, সেই লড়াইকে চালিয়ে রাখতে হবে, এগিয়ে নিতে হবে। সেটিই হবে তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মান।’

সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান, জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, শাহ আলমগীরের স্ত্রী ফৌজিয়া আলমগীর প্রমুখ।