স্বেচ্ছাসেবী তরুণেরাই বদলে দেবেন দেশের দৃশ্যপট

ভিএসও-প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা ২০২০ বিষয়ে মতবিনিময় সভার একটি মুহূর্ত। রংপুর, ৪ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
ভিএসও-প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা ২০২০ বিষয়ে মতবিনিময় সভার একটি মুহূর্ত। রংপুর, ৪ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা। এই কিশোর বয়সেই পড়াশোনার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে সে। ‘মুক্ত বিহঙ্গ’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করে বাল্যবিবাহ ও ইভ টিজিং প্রতিরোধে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে আলোচনা ও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষক পরিচালনা করে চলেছে। বুধবার রংপুর প্রথম আলো কার্যালয়ে ভিএসও-প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা মতবিনিময় সভায় কিশোরী আয়েশা সিদ্দিকা এ কথা জানায়।

মতবিনিময় সভায় প্রায় ২০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ জেলার মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট শিক্ষক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ‘উই ফর দেম’ সংগঠনের প্রতিনিধি জীবন ঘোষ বলেন, চার বছর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো সংগ্রহ করে তা পথশিশুসহ অসহায়-গরিব মানুষের মুখে তুলে দেওয়ার কাজ করে আসছেন তাঁরা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বেচ্ছাসেবীরা নিজের পরিচয় ও নিজ নিজ কার্যক্রমের বিষয় তুলে ধরেন। কেউ বিনা মূল্যে বই বিতরণ করেন। কেউ চিকিৎসাসেবায় গরিব মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। শীতার্ত ব্যক্তিদের পাশে ছুটে যান অনেকেই। বন্যার্তদের সাহায্যেও কাজ করে থাকে বিভিন্ন সংগঠন। এসব কার্যক্রম বেগবান করে স্বেচ্ছাসেবী তরুণেরাই দেশের দৃশ্যপট বদলে দেবেন বলে আশা করা হয়।

বেগম রোকেয়া পায়রাবন্দ স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রোকেয়ার গ্রামটি আলোকিত করার জন্য ৩০ বছর থেকে একটি পাঠাগার পরিচালিত করে আসছি। আমাদের পাঠাগারে দুই বাংলার অধিকাংশ লেখকের উল্লেখযোগ্য বই আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের নিজেই বই পড়ে শুনিয়েছি। সেই সঙ্গে গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পেরেছি। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে রোকেয়া ব্রিগেড গঠন করে সামাজিক আন্দোলন করা হয়েছে।’

দুপুরে মতবিনিময় শুরু হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবীদের নানামুখী কার্যক্রমের গল্প শুনে উপস্থিত বিশিষ্টজনসহ অতিথিরা অভিভূত হন। সবার প্রাণবন্ত আলোচনায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো মতবিনিময় সভা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সাইকিউর অর্গানাইজেশন’ সংগঠনের ইশরাত জাহান বলেন, চার বছর ধরে তাঁদের সংগঠন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনলাইন ও অফলাইনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

স্বেচ্ছাসেবকদের মুখে উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনে অভিভূত হয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি মোশফেকা রাজ্জাক বলেন, ‘এখনকার তরুণেরা আমাদের থেকে আরও বেশি উদ্যম। তারা যেসব কাজ করছে, তাতে করে মনে হয়, এই স্বেচ্ছাসেবী তরুণেরাই একদিন বদলে দেবে দেশের দৃশ্যপট।’

সভায় অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেছেন রংপুর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সদরুল আলম, চিকিৎসক ও সমাজসেবক মফিজুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ শাহ আলম, শিক্ষক ও রবীন্দ্র গবেষক শাশ্বত ভাট্টাচার্য, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষক আজহারুল ইসলাম, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুম্মানা জামান, সচেতন নাগরিক কমিটির সামসাদ বেগম, রংপুর মেডিকেল কলেজের সন্ধানীর সভাপতি হারুন অর রশিদ প্রমুখ।

মতবিনিময় পর্বের পর প্রথম আলোর গান ‘সেদিন আর কত দূরে’ এবং প্রথম আলোর ভিডিও চিত্র ‘নায়ক ও অধিনায়কেরা’ প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন প্রথম আলোর রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুল হক। আর পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক মুনির হাসান।

আরও পড়ুন: