চবিতে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তিন উপপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বুধবার বিকেলে শাহ জালাল আবাসিক হলের সামনের চিত্র। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তিন উপপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বুধবার বিকেলে শাহ জালাল আবাসিক হলের সামনের চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্রলীগের পূর্বশত্রুতা ও কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আজ বুধবার ক্যাম্পাসে তিন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ কর্মী আহত হয়েছেন।

ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, বিবদমান পক্ষ তিনটি হলো ‘সিক্সটি নাইন’, ‘কনকর্ড’ ও ‘বিজয়’। তাদের মধ্যে বিজয় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসানের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। পাশাপাশি সিক্সটি নাইন ও কনকর্ড চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। বিজয়ের নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ। আর সিক্সটি নাইনের নেতৃত্বে আছেন সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ওরফে টিপু এবং কনকর্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক।

বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি মেয়র নাছিরের ও অন্যটি শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারী বলে পরিচিত। এই দুই পক্ষের মধ্যে আরও ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। গত পাঁচ বছরে এসব উপপক্ষের মধ্যে অসংখ্যবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন শতাধিক নেতা-কর্মী। এর আগে গত ১ মার্চ ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল সিক্সটি নাইন ও চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার।

ঘটনার সূত্রপাত:
আলাওল হলের ২৩৮ নম্বর কক্ষে বিজয়ের কর্মী মো. আবদুল্লাহ ও কনকর্ডের কর্মী আরমান হোসেন বসবাস করেন। এ দুজনের মধ্যে কয়েক দিন ধরে ঝগড়া হচ্ছিল। পরে আবদুল্লাহ বিজয়ের আরেক কর্মী মো. আবিরকে নিয়ে গত সোমবার আরমানকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে আরমান সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার রাতে আবিরকে মারধর করেন। এর থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত।

এ ঘটনার রেশ ধরে আজ বিকেলে সিক্সটি নাইনের এক কর্মীকে মারধর করেন বিজয়ের নেতা-কর্মীরা। ঘটনা জানাজানি হলে সন্ধ্যায় আবারও সংঘর্ষে জড়ায় সিক্সটি নাইন ও বিজয়। রামদা, লোহার রড, কাচের বোতল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে অবস্থান নেন বিজয়ের নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি শাহজালাল হলের সামনে অবস্থান নেয় সিক্সটি নাইন। এ সময় উভয়ই একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ এসে উভয়কে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পাশাপাশি চারজনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া ইটপাটকেলে আঘাতে ও পুলিশের ধাওয়ায় তিন উপপক্ষের পাঁচ কর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্যে চারজনকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আর একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানান প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব।

এ বিষয়ে প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বারবার শান্ত থাকতে বলা হলেও এসব উপপক্ষ বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। তাঁদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। আর আটককৃতদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিন নেতার পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
সিক্সটি নাইনের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিজয়ের নেতা মো. ইলিয়াছ হিযবুত তাহরীরের সদস্য। ইলিয়াছ ও বিজয়ের আরেক নেতা জাহেদুল আউয়ালের নির্দেশেই আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর বারবার হামলা করা হচ্ছে। আর এতে ইন্ধন দিচ্ছে এক সহকারী প্রক্টর। তাই সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ ও বিজয়ের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। নয়তো আমরা আন্দোলনে যাব।’

বিজয়ের নেতা ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁদের এক কর্মীকে সিক্সটি নাইন ও কনকর্ডের নেতা-কর্মীরা মারধর করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর ইকবাল হোসেনের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই। কারণ তাঁর নির্দেশেই এসব সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটছে। তাই ইকবালকে এ পদ থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানান তিনি।

অন্যদিকে কনকর্ডের নেতা ও সাবেক সহসভাপতি আবদুল মালেক বলেন, বিজয়ের নেতা-কর্মীরা রাতের আঁধারে হলে ঢুকে তাঁদের কর্মীদের মারধর করেছেন। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি। বিজয়ের নেতাদের নামে বিভিন্ন অভিযোগও রয়েছে।