বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নতি দেখতে চায় ভারত: রীভা গাঙ্গুলি দাশ

ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্কের সেরা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের তাকাতে হবে ভবিষ্যতের দিকে। নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের অব্যাহত প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নতি দেখতে চায় ভারত। কাজেই দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কের বড় ক্যানভাসটা যেন আমরা মনে রাখি। কাজেই আমাদের দৃষ্টি থাকবে ভবিষ্যতের দিকে।’

দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার মূল বার্তা কী ছিল, জানতে চাইলে আজ বুধবার তিনি প্রথম আলোর কাছে এ মন্তব্য করেন।

প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে গত সোমবার দুই দিনের সফরে ঢাকায় ঘুরে গেছেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ঢাকায় আসেন।

ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলো কার্যালয় পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তাঁকে স্বাগত জানান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।

প্রথম আলো সম্পাদকের সঙ্গে সৌজন্য আলোচনার পর তিনি ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সদ্য সমাপ্ত সফর এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরের বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সফর নিয়ে জানতে চাইলে রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, ‘উনি (নরেন্দ্র মোদি) মূলত মুজিব শতবর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসছেন। ওই সফরের প্রস্তুতি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকায় আলোচনা করে গেছেন। আমরা সব সময় বলি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আপনারা যতটা গর্বিত, আমরাও তাঁকে নিয়ে সে রকম গর্ববোধ করি। কারণ তিনি বিশ্বের এক মহান নেতা।’

ভারতীয় হাইকমিশনার জানান, গত বছরের অক্টোবরে দিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একটি ছিল মৈত্রী এক্সপ্রেসের ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা সহজীকরণের অংশ হিসেবে স্থলবন্দরের ক্ষেত্রে নতুন দুটি রুটকে যুক্ত করা। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ভারতীয় ভিসা নেওয়ার পর আকাশপথে, রেলপথে এবং বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আসা–যাওয়া করতে পারেন। এখন স্থলবন্দরের ক্ষেত্রে ভোমরা-গোজাডাঙ্গা এবং আখাউড়া-আগরতলা যুক্ত হচ্ছে। এটি ঘটলে লোকজনের ভারতে আসা–যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পাবেন। এ সিদ্ধান্তটি দ্রুত কার্যকর হতে যাচ্ছে।

প্রথম আলো কার্যালয়ে ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ। বুধবার, ঢাকা। ছবি: জিয়া ইসলাম
প্রথম আলো কার্যালয়ে ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ। বুধবার, ঢাকা। ছবি: জিয়া ইসলাম

রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে নতুন নতুন অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ভিসা সহজীকরণের মধ্য দিয়ে তাঁর সেসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান ভিসার ক্ষেত্রে।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সফর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশ সফর নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। তিনি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে একটি সেমিনারে বক্তৃতার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে অনেকগুলো বিষয় স্পষ্ট করেছেন। সীমান্ত হত্যা দিকে তাকালে দেখব, ২০১৮ সালে সীমান্ত হত্যার সংখ্যা ছিল তিন। সেই তুলনায় ২০১৯ সালে সংখ্যাটা বেশি। তবে তিনজনের মৃত্যুও দুঃখজনক। এটাও মনে রাখা উচিত, অপরাধমূলক ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তবে সীমান্তে একটি হত্যাও কাম্য নয়।’

অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তিতে অগ্রগতি হয়েছে, এটিও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব উল্লেখ করেছেন বলে জানান তিনি। হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা স্পষ্ট করেই বলেছেন সব অংশীজনকে নিয়েই ভারত চুক্তিটি সই করবে। তার মানে এই নয় যে বাকি নদীগুলোর সহযোগিতার প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বসে থাকতে হবে। রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, ‘আমরা এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্য সাতটি অভিন্ন নদীর তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করেছি। আশা করছি, কারিগরি ও সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষ করতে পারলে খুব দ্রুত এই নদীগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’

রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, ‘ভারতের নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিষয়গুলোও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। অনেক কিছু ভুল তথ্যকে কেন্দ্র করে বলা হচ্ছে। সিএএ হচ্ছে দ্রুত ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়া নিশ্চিত করা। এই আইন প্রযোজ্য হওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সময়সীমা হচ্ছে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর। তার মানে হচ্ছে, যারা ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের পাঁচ বছর আগে ভারতে পৌঁছেছেন, তাঁরাই সিএএ অনুযায়ী দ্রুত ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন। তার মানে হচ্ছে, ২০০৯ সালের আগে যাঁরা ভারতে গেছেন, তাঁদের কথাই এখানে বলা হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত যে এনআরসি কার্যকর হয়নি, সেটি ঘোষণা করা হয়েছে।’