পা দিয়ে লেখেন রফিকুল, শিক্ষক হওয়া তাঁর স্বপ্ন

পা দিয়ে লিখে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেন রফিকুল ইসলাম। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ কেন্দ্রে।  প্রথম আলো
পা দিয়ে লিখে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেন রফিকুল ইসলাম। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ কেন্দ্রে। প্রথম আলো

জন্ম থেকেই পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রফিকুল ইসলামের (২৩) দুটি হাত নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাঁকে দমাতে পারেনি। ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজা থেকে পোশাক পরা, সবই করেন পা দিয়ে। পা দিয়ে লিখেই পেরিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি। স্নাতক পর্যায়ে পড়ুয়া রফিকুলের স্বপ্ন শিক্ষক হওয়া। 

রফিকুল এখন পড়ছেন ভাঙ্গুড়া উপজেলার হাজী জামাল উদ্দিন কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে। সম্প্রতি পা দিয়ে লিখেই অংশ নেন তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায়। তাঁর বাড়ি উপজেলার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ডেমরা পশ্চিমপাড়া গ্রামে। 

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে রফিকুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। জানা যায়, তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বড় ভাই বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করেন। ছোটবেলা থেকেই রফিকুলের ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। সে ইচ্ছা থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন তিনি। এ জন্য অভ্যাস করেছেন পা দিয়ে লেখার। ২০১৫ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৩ দশমিক ৫৬ এবং ২০১৭ সালে এইচএসসিতে বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ৩৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। 

এডওয়ার্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের নিচতলার একটি কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন রফিকুল। কক্ষটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে একমাত্র রফিকুল লিখছিলেন পা দিয়ে। কক্ষের সামনের দিকে একটি বেঞ্চের ওপরে বসে ডান পায়ের বুড়ো আঙুলসহ দুই আঙুলে কলম ধরে লিখছিলেন আপন মনে। 

পরীক্ষা কক্ষের ইনচার্জ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান বলেন, ‘রফিকুল বেশ মনোযোগী। পরীক্ষার কক্ষে তাঁর পূর্ণ মনোযোগ খাতার দিকে থাকে। পা দিয়ে সে খুব দ্রুত লিখতে পারে। লেখাও বেশ স্পষ্ট।’ 

পরীক্ষা শেষে কথা হয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, কৃষক বাবার আয় দিয়েই সংসার চলে। ফলে পড়াশোনা চালাতে অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হয়। তবে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সহযোগিতায় তিনি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে শিক্ষকতা পেশা অথবা একটা ভালো চাকরি করার ইচ্ছা।

রফিকুলের মা ছবিলা খাতুন মুঠোফোনে জানান, ছোটবেলা থেকেই রফিকুল কারও ওপর নির্ভরশীল থাকতে চাননি। নিজে নিজেই সব
কাজ রপ্ত করে নিয়েছেন। নিজের সব কাজ তিনি নিজেই করেন।

ভাঙ্গুড়ার হাজী জামাল উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুজ্জামান বলেন, হাত না থাকলেও তাঁর মনোবল শক্ত আছে। চেষ্টা চালিয়ে গেলে তিনি ভালো করবেন।